যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের গুপ্তচরবৃত্তি
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/16/photo-1429164466.jpg)
বাংলাদেশে গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। প্রাপ্ত তথ্য তারা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু গোপন নথি থেকে বিষয়টি জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যমের কাছে সংশ্লিষ্ট কিছু নথি দিয়ে গুপ্তরচরবৃত্তির কথা ফাঁস করেছেন। তাঁর (স্নোডেন) দেওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ডের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।
হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডের সরকারি তথ্য নিরাপত্তা ব্যুরো (জিসিএসবি) বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী তৎপরতাকে সহায়তা করতে নিউজিল্যান্ড এ নজরদারি শুরু করে। তৎপরতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সফল অভিযান হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে এনএসএ।
২০১৩ সালের এপ্রিলের একটি গোপন নথি থেকে জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে গোয়েন্দাগিরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ওই নথির ‘ওয়াট পার্টনারস প্রোভাইডস টু এনএসএ’ শীর্ষক একটি প্যারায় বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ও ভারতকে অনন্য সহায়তা দিয়ে আসছে নিউজিল্যান্ড। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করত জিসিএসবি।
হেরাল্ডের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নিরাপত্তা সংস্থা হলো ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসএ) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ তিনটি বাহিনীর বিরুদ্ধেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে।
হেরাল্ডের কাছে থাকা নথিগুলো থেকে জানা গেছে জিসিএসবি কীভাবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্যবিনিময় করত। একই সঙ্গে সংস্থাটি র্যাবের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও তদারকি করত বলেও জানা গেছে।
২০০৯ সালের আরেকটি নথি থেকে করা একটি প্রতিবেদনে ‘ওসিআর’ নামে জিসিএসবির একটি ইউনিটের গোয়েন্দা পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। এতে বলা হয়, জিসিএসবি ঢাকায় বিশেষ স্থান ব্যবহার করত, যেখানে মোবাইল সংযোগ থাকত না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নিউজিল্যান্ডের কোনো হাইকমিশন বা নির্দিষ্ট কোনো দপ্তর নেই, যেখানে বসে গোপনে কার্যকলাপ চালাতে পারে বা আড়ি পাততে পারে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোনো অফিস থেকে তাদের কার্যক্রম চালাত নিউজিল্যান্ডের সংস্থাটি, যার তদারকি করত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ এবং সিআইএ।
বাংলাদেশে গোয়েন্দাগিরিতে জিসিএসবির সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নিউজিল্যান্ডের গ্রিন পার্টির নেতা ড. রাসেল নরম্যান বলেন, বাংলাদেশের যেসব গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জিসিএসবি তথ্য পাচার করত, সেগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্প্রদায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ নিরীহ লোকজনকে লক্ষ্য বানানো, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জন কি সব সময়ই জিসিএসবির পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন যে, ব্যুরো ভালো মানুষকে রক্ষা করে। কিন্তু এই নথিপত্র প্রকাশ করেছে যে, তারা খারাপ মানুষকে সহায়তা করছে।’
‘অধিকাংশ নিউজিল্যান্ডার এটিকে দুঃখজনক মনে করবেন এবং একমত হবেন যে, এটি জিসিএসবির আওতার বাইরে,’ যোগ করেন রাসেল।
এ বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার মুফতী মাহমুদ খান কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কোথায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে তা দেখি, কী নথি তা দেখি। সেগুলো কতটুকু অথেনটিক (যথার্থ), সেটা দেখেই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে।’