রক্তশূন্যতায় ভুগছেন? যা খাবেন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুরুষের তুলনায় নারীর রক্তশূন্যতা বেশি। এর কারণ হিসেবে মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল বা প্রসূতিকাল ছাড়াও বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। তাহলে রক্তশূন্যতা রোগীদের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?
এনটিভির স্বাস্থ্যবিষয়ক এক আয়োজনে রক্তশূন্যতা রোগীদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ। তিনি বলেন, যদি রক্তশূন্যতা স্বল্প আকারে হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ সেভাবে প্রকাশিত হয় না। কিন্তু রক্তশূন্যতা যদি তীব্র আকার ধারণ করে, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ
রক্তশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে মাথাব্যথা করা, মাথা ঝিমঝিম করা, বুক ধড়ফড় করা, কম পরিশ্রমে ক্লান্তি অনুভব করা এবং অবসন্নতা। এ ছাড়া ত্বক বা মুখে ফ্যাকাশে ভাব দেখা যায়। পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বের করতে হবে, কী কারণে রক্তশূন্যতা হয়েছে। নানা কারণে রক্তশূন্যতা হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা।
আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতায় খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, সাধারণত আমরা যদি পর্যাপ্ত আয়রন-জাতীয় খাবার গ্রহণ না করি, তাহলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে, আমরা পর্যাপ্ত আয়রন-জাতীয় খাবার খাচ্ছি, কিন্তু সেটা শরীরে শোষিত হচ্ছে না বা শরীর থেকে বর্জ্যের মাধ্যমে বের হয়ে যাচ্ছে। এসব নানা অজানা কারণেও আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদের পরামর্শ, আয়রনজনিত রক্তশূন্যতা দেখা দিলে প্রথমেই আমাদের যে কাজটি করতে হবে, আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে আয়রন-জাতীয় খাবারের উৎস। আমরা সাধারণত দুটি উৎস থেকে আয়রন-জাতীয় খাবার পেয়ে থাকি। একটি হচ্ছে হিমজাতীয় আয়রন খাবারের উৎস, আরেকটি নন-হিমজাতীয় খাবারের উৎস। হিমজাতীয় খাবার সাধারণত গরুর মাংস, খাসির মাংস, গরুর কলিজা, খাসির কলিজা, মুরগির মাংস, ডিম ইত্যাদি এবং সামুদ্রিক মাছ থেকে পেয়ে থাকি। আর নন-হিম আয়রন আমরা সাধারণত গাঢ় সবুজ শাকসবজি, যেমন পালং শাক, এ জাতীয় খাবার থেকে পেয়ে থাকি। আমরা যদি আমাদের খাদ্যতালিকায় নন-হিমজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করি, তাহলে সাথে কিন্তু এক টুকরো লেবু বা ভিটামিন সি-র কোনো উৎস রাখতে হবে। কারণ, নন-হিমজাতীয় আয়রন শরীরে খুব ভালোভাবে শোষিত এবং কাজ করার জন্য আমাদের ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, আমরা সাধারণত অনেকেই ওজন নিয়ে চিন্তিত বা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা থাকে, যেগুলোর জন্য আমাদের খাদ্যতালিকায় আমরা গরু-খাসির মাংস অন্তর্ভুক্ত করতে ভয় পাই। আমরা ভাবি, এ জাতীয় খাবার যদি আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করি, সে ক্ষেত্রে আমাদের শারীরিক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। যদি কোনো শারীরিক জটিলতা না থেকে কেউ রক্তশূন্যতায় ভোগে, তাহলে তারা খাদ্যতালিকায় গরু বা খাসির মাংস বা কলিজা টানা ১৫ দিন (প্রতিদিন ৮৫ গ্রাম) রাখেন, তাহলে আয়রনজনিত যে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটি প্রশমণে সাহায্য করবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে রান্নার পদ্ধতিটা হবে স্বাস্থ্যকর। কারণ, সাধারণত আমরা বাসায় বা দাওয়াতে খেতে গেলে অনেক গুরুপাক বা ভুনা করে গরুর মাংস বা খাসির মাংস খেতে পছন্দ করি। তাই খেয়াল রাখতে হবে রান্নার পদ্ধতি যেন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর হয়।
খেজুর আয়রন-জাতীয় খাবারের একটি ভালো উৎস। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখতে পারেন। বাদাম থেকে আমরা ফোলেট ও ভিটামিন বি৬ পেয়ে থাকি, যেগুলো আমাদের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে যদি লোহিত রক্তকণিকা কম থাকে বা যদি উৎপন্নই না হয়, তাহলে হাজার আয়রন-জাতীয় খাবার খেয়েও লাভ হবে না। রক্তশূন্যতা কমাতে কখনোই সেটি সাহায্য করবে না। সে জন্য খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফোলেট ও ভিটামিন বি৬-জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় আনার ও তরমুজ রাখতে পারেন। পুদিনাপাতা ও ধনেপাতার রস করে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া আমরা খাদ্যতালিকায় বিটের জুস অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, যেটি সাধারণত আমাদের এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ বলেন, চিংড়ি মাছ আয়রনের অভাব দূর করতে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, কলা আমাদের জন্য এ ক্ষেত্রে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। আমরা যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত, তারা একেবারেই কলা খেতে চাই না। কিন্তু আমরা যদি ক্যালোরি ব্যালান্স করে খাই, সে ক্ষেত্রে আমরা সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি কলা খেতে পারি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। তাহলে রক্তশূন্যতা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। এ ছাড়া আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার এবং যেসব খাবারে ক্যাফেইন আছে, সে জাতীয় খাবারগুলো যদি আমরা আয়রন-জাতীয় খাবারের সাথে সাথে গ্রহণ করি, তাহলে আয়রন-জাতীয় খাবার শোষণে বাধা প্রদান করবে। সে ক্ষেত্রে আয়রন-জাতীয় খাবার খাওয়ার কিছু সময় পরে ক্যাফেইন বা ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করব এবং আয়রন-জাতীয় খাবার গ্রহণের পরপর এ জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকব।