মেয়রের বাড়ি থেকে অস্ত্র, মাদক, কোটি টাকা উদ্ধার
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ প্রায় কোটি টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার ভোর রাতের এই অভিযানের খবর আঁচ করতে পেরে মেয়র বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছেন। তবে পুলিশ মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং দুই ভাতিজা সোহান ও শান্তকে আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে মুক্তার আলী স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আড়ানী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনু। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে মজনুর ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। এ সময় মেয়র মজনুকে পেটাতে শুরু করেন। জীবন বাঁচাতে মজনু দোকানের পেছনে বাড়িতে ঢুকে পড়েন। মেয়র ও তাঁর লোকজন বাড়িতে গিয়ে মজনুকে আবারও পেটাতে শুরু করেন। এ সময় মজনুকে বাঁচাতে তাঁর কলেজ পড়ুয়া ছেলে ও স্কুলশিক্ষক স্ত্রী এগিয়ে গেলে তাদেরও মারপিট করে আহত করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আঙ্গুরের নাম উল্লেখ করে বাঘা থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন মামলার বিষয়টি জানতে পেরে রাতেই মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল আহমেদ ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ বুধবার ভোররাতে মেয়র মুক্তার আলীর পিয়াদাপাড়া এলাকার দোতলা বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মেয়র ও তাঁর ছেলে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। তবে অভিযানকালে মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৪০) এবং মেয়রের দুই ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্ত (২৩) পুলিশের হাতে আটক হয়।
বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, অভিযানকালে মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে একটি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশি তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, পিস্তলের চারটি ম্যাগাজিন, ১৭টি তাজা গুলি, চারটি গুলির খোসা, শটগানের ২৬টি গুলি, ১০ গ্রাম গাঁজা, সাত পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, ১৮ লাখ টাকার স্বাক্ষর করা চেকের পাতা এবং নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোনো অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না। উদ্ধারকৃত টাকার উৎস সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী কোনও জবাব দিতে না পারায় টাকাগুলো জব্দ করা হয়েছে।
এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক ও অবৈধ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে থানায় পৃথক পৃথক মামলা হবে। মেয়রকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।