মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ২৪ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড
মিসরের রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের ২৪ সদস্যের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শুক্রবার মিসরের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা আল-আহরামের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। পৃথক দুইটি মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মিসরের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বাহিইরা প্রদেশের দামানহুর শহরের ক্রিমিনাল কোর্টে ব্রাদারহুডের স্থানীয় ১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে প্রদেশের রাশিদ শহরে পুলিশের বাসে বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। ওই ঘটনায় তিন পুলিশ নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছিল।
একই আদালত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আদ-দিলনিজাত শহরে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে ব্রাদারহুডের আরও আট সদস্যকে মৃতুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ২৪ আসামির মধ্যে আটজন পলাতক রয়েছে।
আল-আহরামে অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি যে, আদালতের এই আদেশই চূড়ান্ত না কি এবং এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। তবে মিসরের বাইরে থেকে পরিচালিত দেশটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ করা শিহাব অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, জরুরি আদালত থেকে রায় হওয়ায় এটিই চূড়ান্ত রায়।
এর আগে গত ১৪ জুন অপর এক মামলায় ব্রাদারহুডের ১২ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন মিসরের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। ২০১৮ সালে মামলায় তাদের প্রথম মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পুনর্বহাল করার আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ‘জনগণ ও পুলিশকে আক্রমণ করার জন্য অপরাধী চক্রকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের’ অভিযোগ আনা হয়।
আরব বসন্তের প্রভাবে ২০১১ সালে মিসরে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতন ঘটে। বিপ্লবের পরে ২০১২ অনুষ্ঠিত মিসরের প্রথম নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি) বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ মুরসি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
কিন্তু এক বছর পরই মোহাম্মদ মুরসির বিপক্ষে এক পাল্টা বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভের জেরে মিসরীয় সামরিক বাহিনী ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে তার সমর্থকরা দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাজধানী কায়রোর রাবা আল-আদাবিয়া স্কয়ারে অবস্থান নিয়ে মোহাম্মদ মুরসির ক্ষমতা পুনর্বহালের দাবিতে একটানা প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন তারা।
ওই বছরের ১৪ আগস্ট রাবা আল-আদাবিয়ার প্রতিবাদকারীদের দমনে অভিযান চালায় মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী। একদিনের ওই অভিযানে আটশ’র বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন। তখন থেকে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ সকল বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর দমন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই সময় মুসলিম ব্রাদারহুড ও সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে বেআইনি ঘোষণা করে মিসরীয় প্রশাসন। কারারুদ্ধ অবস্থায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ২০১৯ সালের ১৭ জুন কায়রোর এক আদালতে শুনানি চলাকালে মৃত্যুবরণ করেন।