বিতর্কিত পুলিশি অভিযানে দুজন নিহতের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের
সম্প্রতি বিতর্কিত এক পুলিশি অভিযানে শ্রীনগরের হায়দারপোরায় দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
নিহতদের পরিবারের দাবি—তারা নিরপরাধ বেসামরিক লোক। অন্যদিকে, পুলিশ বলছে—নিহত দুই ব্যক্তি ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সহযোগী’ ছিল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিতর্কিত পুলিশি অভিযানের বিষয়ে তদন্ত করবেন।
গত সোমবার রাতে শ্রীনগরের হায়দারপোরা অঞ্চলে একটি দোকানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখানে এক পাকিস্তানি এবং এক কাশ্মীরি জঙ্গি লুকিয়ে ছিল। পুলিশ দেখেই তারা গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এতে ওই দুই জঙ্গি নিহত হয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ দাবি করেছিল, এনকাউন্টারের (বন্দুকযুদ্ধ) সময় জঙ্গিদের গুলিতে আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা। পরে অবশ্য পুলিশ জানায়—ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয়েছে ওই দুই ব্যক্তির।
কিন্তু, পুলিশের দাবি মানতে রাজি নয় নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার দিনভর শ্রীনগরের সড়কে বিক্ষোভ করেছেন নিহতদের পরিবারএর সদস্যসহ স্থানীয়রা। পরে রাতে পুলিশ তাঁদের আটক করে বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ে। অভিযোগ রয়েছে, এনকাউন্টারের ঘটনার পর শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ওই চার ব্যক্তির মরদেহ কবর দেয় পুলিশ। আইনশৃঙ্খলার যুক্তি দিয়ে নিহতদের পরিবারের কাছে মরদেহ দেওয়া হয়নি।
নিহতদের অন্যতম মুদাসির গুল। পেশায় দাঁতের চিকিৎসক মুদাসিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, এক পুলিশকর্মী এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিক্ষোভস্থল থেকে সরে গেলে তাঁদের হাতে মরদেহ তুলে দেওয়া হবে। পরিবার লিখিত আশ্বাস চেয়েছিল। এর পরেই বড় বড় গাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিবারের লোকেদের আটক করা হয়।
আরেক নিহতের নাম আলতাফ ভাট। পেশায় ব্যবসায়ী আলতাফের মেয়ে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তার বাবাকে মারা হলো। উত্তরে পুলিশ সদস্যেরা কেবল হেসেছেন।
সবারই অভিযোগ, ঠান্ডা মাথায় পুলিশ খুন করেছে ওই ব্যক্তিদের। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। পুলিশ অবশ্য এখনও নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনেই কথা বলছে।
এনকাউন্টারে তৃতীয় যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তাঁর নাম আমির মাগরে। পুলিশের দাবি—আমির একজন জঙ্গি। আমিরের বাবার নাম আবদুল লতিফ মাগরে। ২০০৫ সালে বিশেষ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। এক জঙ্গির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পাথর দিয়ে তাকে মেরেছিলেন তিনি। যার জন্য সেনাবাহিনীর প্রসংশাপত্রও পেয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির বাইরে এখনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। ছেলেদের কীভাবে গোপনে বড় করতে হয়েছে তাঁকে, সে কথা এর আগেও বলেছেন তিনি।
আবদুল লতিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বরাবরই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, লড়াই করেছি। ছেলেদের সে শিক্ষাই দিয়েছি। এখন আমার ছেলেকেই সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। এরপর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তাকর্মী আমাকে গুলি করেও বলবে—আমি সন্ত্রাসী।’
শ্রীনগরের এই পুলিশি অভিযান সাড়া ফেলেছে কাশ্মীর উপত্যকায়। সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ এ ঘটনার প্রতিবাদ করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। পুলিশ সত্যিই ভুয়া এনকাউন্টার করেছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক দিলবাগ সিং বলেন, ‘আমরা দুই পরিবারের দাবিগুলো খতিয়ে দেখব। যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে, তা সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কোথায় কী ভুল হয়েছে, তা পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে।’
‘হায়দারপোরা এনকাউন্টারে কী হয়েছে, তা আমরা খুঁজে বের করব। আমরা জনগণের নিরাপত্তার জন্যই রয়েছি। তদন্ত করা থেকে আমরা পিছপা হবে না’, যোগ করেন দিলবাগ সিং।
জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কার্যালয় টুইট করে বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে ‘কোনো অবিচার না হওয়া নিশ্চিত করা হবে।’