লারার যে রেকর্ড আজও ভাঙেনি

মাত্র ছয় মাস হয়েছে ৩৭৫ রান করে নতুন রেকর্ডের মালিক হয়েছেন ম্যাথু হেইডেন। যার রেকর্ড ভেঙেছেন, সেই ব্রায়ান লারার কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। সুযোগ খুঁজছিলেন রেকর্ডটা পুনরুদ্ধার করতে। হবে বয়স ততদিন বেড়ে গেছে। লারা কি পারবেন রেকর্ডটা পুনরুদ্ধার করতে? এমন প্রশ্নে সরগরম ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। ইংল্যান্ড দল তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। চার টেস্ট ম্যাচ সিরিজের তিনটিতেই সুপার ফ্লপ ব্রায়ান লারা। ছয় ইনিংসের দুটিতে শূন্য রানে আউট। সর্বোচ্চ ৩৬ করেছেন তৃতীয় টেস্টে। ততদিনে সিরিজ হেরে বসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১০ এপ্রিল, অ্যান্টিগায় আজকের দিনেই শুরু হয় সিরিজের চতুর্থ টেস্ট। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুটা ভালো হয়নি ক্যারিবীয়দের। ৩৩ রানে ফিরে যান ড্যারেন গঙ্গা। শুরুতেই আউট হতে গিয়েও হননি। ব্যক্তিগত তিন রানে হার্মিসনের বলে লারাকে আউট দেননি আম্পায়ার ড্যারেল হারপার। এরপর ১২ ওভারে ৬৫ রানের জুটি গড়েন লারা ও গেইল। ৮০ বলে ৬৯ রান করে লারাকে একা ফেলে রেখে প্যাভিলিয়নে ফিরে আসেন গেইল। লাঞ্চের পর অ্যান্টিগায় শুরু হয় বৃষ্টি। লারা-সারওয়ান ১০০ রানের জুটি বেঁধে প্রথম দিনটা শেষ করেন। ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন লারা।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও লারা ছিলেন সপ্রতিভ। সারওয়ানকে নিয়ে যোগ করলেন আরো ১৫২ রান। ৯০ রান করে সারওয়ান ফিরলেন হার্মিসনের বলে। অপরপ্রান্তে লারা খেলে চলছেন নিজের মতোই। ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন ২৬০ বলে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি এলো ৪০৪ বলে। ট্রিপল সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় দিনটা শেষ করলেন ক্রিকেটের বরপুত্র।
তৃতীয় দিনের খেলার শুরুর আগে আবার আলোচনায় হেইডেনের ৩৮০ রান। ৩১৩ রানে নিয়ে দিনের শুরুটা করলেন লারা। সঙ্গী রিডলে জ্যাকবসের রান ৪৭। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই শুরু করলেন ব্রায়ান লারা। দ্রুতই পেরিয়ে গেলেন সাড়ে ৩০০ রানের মাইলফলকও।
লারা তখন ৩৭৪ রানের সামনে। গ্যারেথ বাটিকে বিশাল এক ছয় মেরে হেইডেনের ৩৮০ রানের রেকর্ডটাকে স্পর্শ করলেন। আরেকটা চার মেরে ছাড়িয়ে গেলেন হেইডেনকে। রেকর্ডটা পুনরুদ্ধার করতে পেরে লারা বাঁধভাঙা উল্লাসটা ছিল দেখার মতো। অ্যান্টিগার দর্শক তখন চলে এসেছে মাঠে। এরপর বাটির বলে আর একটা চার মেরে পৌঁছে গেলেন ৪০০ রানে। টেস্ট ক্রিকেটের সোয়াশ বছরের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪০০ রানের মাইলফলক ছুঁলেন লারা। লারার যখন ৪০০, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ৫ উইকেটে ৭৫১ রান। ৭৭৮ মিনিট ক্রিজে ছিলেন তিনি। বল খেলেন ৫৮২টি। ৪৩টি চার এবং চারটি ছক্কা মারেন রানের এভারেস্টে পৌঁছাতে। প্রথম ইসিংসে ৯৯ ওভারে ২৮৫ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ৪২২ রান করার পর ম্যাচটি ড্র হয়ে যায়।
ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোয়ান্টিপল (৫০১) এবং টেস্ট ক্রিকেটে কোয়াড্রপল সেঞ্চুরি (৪০০) করেন। ১৯৯৪ সালে উইকশায়ারের হয়ে ডরহামের বিপক্ষে ৫০১ রান করেন। এখনো এ রান কোনো ক্রিকেটার করতে পারেনি। ২৩ বছরের পরও এখনো এই রেকর্ড অক্ষত।