ফেদেরার যুগের শেষ কোথায়?
‘চল্লিশে চালসে’ এমন কথা টেনিসের ক্ষেত্রে অন্তত বেমানান। এখানে সংখ্যাটা আরো ১০ নেমে ৩০ হবে। যে কায়িক শ্রম এই খেলায় দিতে হয়, তাতে ত্রিশের পরে পেশাদার কাউকে টেনিস খেলতে দেখলে অবাকই হতে হয়।
কিন্তু খেলোয়াড়টা যখন রজার ফেদেরার, তখন এসব বয়সের হিসাব কেবল একটা সংখ্যা মাত্র। ৩৬ বছর বয়সেও যিনি খেলে যাচ্ছেন দুর্দান্ত গতিতে। সদ্যই জয় করলেন ২০তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। পুরুষ এককে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, ভাবনা নয়—বাস্তবেই করে দেখিয়েছেন ফেদেরার।
২০০২ সালে ইউএস ওপেনে ১৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পিট সাম্প্রাস বিদায় নিলে টেনিস দুনিয়া ভেবেছিল এটাই শেষ। কেউই হয়তো সাম্প্রাসের রেকর্ড আর ভাঙতে পারবেন না। সেই পিট সাম্প্রাসও ফেদেরার ২০তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ে অবাক। তিনি ভেবে পান না, ফেদেরার কীভাবে তাঁর স্থান ধরে রেখেছেন। কিন্তু ফেদেরার মতো কিংবদন্তি আসেনই যেকোনো রেকর্ডকে গুঁড়িয়ে নিজের করে নেওয়ার জন্য। যাঁরা লড়াই করেন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে, শূন্যে উঠে দুহাত ছড়িয়ে মৌনতায় বুঝিয়ে দেন ‘আমিই সেরা!’
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এবার পুরুষ এককে তারকা বলতে একমাত্র নাম ছিল ফেদেরার। দুই শীর্ষ বাছাই র্যাংকিংয়ের এক নম্বর স্প্যানিশ তারকা রাফায়েল নাদাল এবং সার্বিয়ার তারকা নোভাক জোকোভিচের বিদায়ের পর একমাত্র তারকা হিসেবে রজার ফেদেরারই টুর্নামেন্টে তারকাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০০৪, ২০০৬, ২০০৭, ২০১০, ২০১৭ সালেও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন এই তারকা। তাই মেলবোর্ন ওপেনের ফাইনাল ছাপিয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফেদেরার ২০তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জিততে পারবেন তো! না, অনায়াসেই সুইস তারকা ক্রোয়েশিয়ার তারকা মারিন চিলিসকে হারাতে পারেননি। ফাইনালের উত্তেজনা ছিল ফাইনালের মতোই। তিন ঘণ্টা তিন মিনিট স্থায়িত্ব এই খেলার সেটগুলো ছিল ৬-২, ৬-৭, ৬-৩, ৩-৬, ৬-১! পঞ্চম সেটে সহজ জয়ে ফেদেরার বুঝিয়ে দেন দিনশেষে তিনিই সেরা।
পেশাদার টেনিসে ১৯৯৮ সালে পা রাখেন ফেদেরার। প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করার জন্য দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপেক্ষা! এর পরের সময়টা শুধু ইতিহাস গড়ার। ছয় বছর পর ২০০৯ সালে উইম্বলডনে অ্যান্ডি রডিককে পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াইয়ে হারিয়ে ১৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করে ভাঙেন সাম্প্রাসের রেকর্ড। এর নয় বছর পর গতকাল মেলবোর্নের রড লেভার স্টেডিয়ামে কুড়িতম শিরোপার দেখা পান এই সুইস তারকা। কারো সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রয়োজন নেই তার, সবাইকে ছাড়িয়ে তিনি চলে গেছেন ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে! আনন্দের মাত্রাটাও তাই একটু বেশি ছিল। ম্যাচ শেষে ফেদেরার শিশুসুলভ কান্নাই বলে দিচ্ছিল কতটা খুশি তিনি। উচ্ছ্বসিত ফেদেরার বলেন, ‘পুরো ম্যাচের সময়টাই আমার মাথায় ছিল আমি ২০তম শিরোপার দ্বারপ্রান্তে। পুরো সময়টাই ভয়ে ছিলাম। ম্যাচ জিতলে কী হবে কিংবা হেরে গেলেই বা কী হবে, এসবই শুধু ভাবছিলাম। উত্তেজনার কারণে ম্যাচ শেষে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি।’
ফেদেরার যুগের শেষ কোথায়? ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম তো হলো, এবার কি থামবেন ফেদেরার? এমন প্রশ্নে হাসিমুখেই ফেদেরার জবাব দেন, ‘ভালোই তো লাগছে। এখনো বেশ ভালোই খেলছি। ফিটনেস ভালো জায়গায় আছে। তাই ভালোই লাগছে।’
না, এখনই থামবেন না ফেদেরার। তাঁর র্যাকেটে টেনিস বিশ্বকে আরো অবাক করার অনেক কিছুই যে এখনো বাকি!