রোনালদোকে পেয়ে একজনের কান্না, আরেকজনের পাগলামি
“আমাকে বোঝা খুব সহজ
কিছু না ভেবেই আমি সবকিছু ভালোবাসি
আমি কখনও সন্তুষ্টির আশায় বসে নেই”
বিখ্যাত পর্তুগিজ কবি আলবার্তো কাইয়েরোর একটি কবিতার তিনটি লাইন যেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে মিলে গেল। রোনালদো তো বহু আগেই বলে দিয়েছেন, যারা আমায় ভালোবাসে, তারা আমায় শক্তিশালী বানিয়ে দেয়। এমন একজনকে ভালো না বেসে পারা যায়?
ইউরো ২০২৪ এর বাছাইপর্বে গত রাতে (১৭ জুন) ঘরের মাঠে বসনিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল গর্তুগাল। এস্তাদিও দে লুইজ স্টেডিয়ামে পর্তুগাল ৩-০ গোলে জিতেছে। ফল ছাপিয়ে আলোচনায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তা পর্তুগালের ম্যাচ হবে আর রোনালদো আলোচনায় থাকবেন না তা হয় নাকি! কাল রাতের আলোচনাটা ভিন্ন, অভিনব, অভূতপূর্ব। জীবনে বহুবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও এই রাতটা হয়তো সেরা।
ম্যাচে গোল পাননি রোনালদো। দল জিতেছে। খেলা শেষে মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় দেখা হয়েছে এমন এক ভক্তের সঙ্গে, যে নিজেই বেশ বড় সেলেব্রিটি। ইউটিউব দুনিয়ায় জনপ্রিয় ইউটিউবার ‘আইশোস্পিড।’ ১৭ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর পরিচিত স্পিড নামে। সিআরসেভেনের বিশাল ভক্ত স্পিড। এতটাই যে রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেদিন দেখা হয়নি। এরপর বেড়েছে অপেক্ষা। আর অপেক্ষার ফল যে মিষ্টি হয়, তা নিশ্চয়ই অজানা নয় কারও।
পর্তগিজ উইঙ্গার রাফায়েল লিয়াওয়ের সঙ্গে আগে থেকে কথা বলা ছিল স্পিডের। পর্তুগালের সাত নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন স্পিড। খানিক বাদে কালো গাড়িতে চড়ে রোনালদো এলেন। লিয়াও এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলেছিল। রোনালদো নেমে এলেন। চারিদিকে তখন জড়ো হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য সবাই ভুলে গেছেন, এখানে রোনালদো আছেন।
কারণ, স্বর্গ কেমন আমরা জানি না। স্বর্গ সুখ কেমন তাও জানি না। জানি, জীবনের পরম আরাধ্য জিনিস পেলে কেমন লাগে। তখন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। স্পিডও হয়ে পড়লেন। রোনালদো যখন গাড়ি থেকে নামছেন, মাটিতে বসে পড়লেন স্পিড। বারবার কেবল ‘ওহ মাই গড’, ‘ওহ মাই গড’ বলে যাচ্ছিলেন। মহানায়ককে সামনে পেয়ে ভাষা হারিয়ে ফেললেন বোধহয়। রোনালদো টেনে তুললেন তাকে। বুকে জড়ালেন। স্পিড এবার আরেকটি বাক্য উচ্চারণ করতে পারলেন।
আবেগের আতিশয্যে, ভালোবাসার পরশে বারবার বলছিলেন, বিগ ফ্যান, বিগ ফ্যান! বাঁহাতের ট্যাঁটু দেখালেন, সিউ উদযাপন করলেন। ছবি তুললেন। সবকিছু ঘটে গেছে খুব দ্রুত। বড়জোর ৪০ সেকেন্ড। রোনলদো চলে যাওয়ার পর বাচ্চাদের মতো কেঁদেই ফেললেন স্পিড। আনন্দে, উল্লাসে, ঘোরে আর মহানায়কের জাদুর স্পর্শে।
এসব বিষয়ে সিআরসেভেনের মতো মহাতারকা ভীষণভাবে অভ্যস্ত। একই দিন স্পিডের আগে ম্যাচেও যেমন ঘটল এমন ঘটনা। তখন ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছিল। হঠাৎই মাঠে দৌড়ে আসছেন এক ভক্ত। হাতে পর্তুগালের পতাকা, কোমরে বাঁধা আরেকটি পতাকা। ছুটে এলেন। সোজা রোনালদোর দুপায়ে পায়ে কুর্নিশ ঠেকলেন। এত বছর ধরে যে দুটি পায়ে বিশ্বকে বিস্মিত করেছেন, তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে একটা কুর্নিশ করাই যায়। ততক্ষণে নিরাপত্তার্ক্ষীরা ছুটে আসছেন। এর ফাঁকে সেই ভক্ত এবার কোলে তুলে নিলেন রোনালদোকে। যার কাঁধে ভর দিয়ে বহুবার বহু বাঁধা উৎরেছে পর্তুগাল, একটু না হয় তার ভারটাই নেওয়া যাক। এই ভেবেই কিনা তাকে কোলে তোলার সময় বাঁধা দেননি রোনালদো নিজেও।
ওই দুই ভক্তের একজন লুটিয়ে পড়ল রোনালদোর পায়ে, আরেকজন হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। যেন বলতে চাইছে, মহারাজা তোমারে সেলাম।
সারাজীবন বলার মতো গল্পের রসদ পেয়েছে ওই ভক্তরা, লিসবনের এস্তাদিও দে লুইজ স্টেডিয়াম থেকে রোনালদো নিজেও কি পাননি কিছু? ম্যাচ ছাপিয়ে যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, এটিই তো আরেকটি নতুন ভোরে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলবে তাকে।