চট্টগ্রাম টেস্ট
প্রোটিয়া রাজত্বে প্রথম দিন শেষে বিপাকে বাংলাদেশ
প্রথম টেস্টের দুঃখ মাড়িয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু, সাগরিকায় শুরুর দিনই সেই স্বপ্ন ভেস্তে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়ে রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনভর ব্যাটিং রাজত্ব দেখল প্রোটিয়ারা। টনি ডি জর্জি ও ত্রিস্তান স্টাবসের শাসনে প্রথম দিন শেষেই বিপাদে বাংলাদেশ।
আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ৮১ ওভারে দুই উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩০৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন ওপেনিংয়ে নামা টনি ডি জর্জি। ২১১ বল খেলে ১৪১ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। সঙ্গে অপরাজিত আছেন ডেভিড বেডিংহ্যাম (১৮)। আরেক সেঞ্চুরিয়ান স্টাবস দিনের শেষ সেশনে উইকেট হারিয়েছেন। তবে ফেরার আগে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে উপহার দিয়ে যান ১৯৮ বলে ১০৬ রানের ইনিংস।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এদিন টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সাগরিকার এই পিচে প্রথম সকালে ব্যাটিংটা তুলনামূলক সহজ। সেই সুযোগটাই মূলত নিতে চেয়েছিল প্রোটিয়ারা। নিজেদের লক্ষ্যে সফল তারা। ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই সাবলীল। দুই ওপেনার টনি ডি জর্জি ও এইডেন মার্করাম শুরুর জুটিতে এনে দেন ৬৯ রান।
প্রথম সেশনে এই জুটি ভেঙে কিছুটা আশা দেখান তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের ১৮তম ওভারে তাইজুলের স্লো ডেলিভারিতে এগিয়ে এসে পুল করতে যান মার্করাম। কিন্তু, নিচু হয়ে যাওয়া বল খুব বেশিদূর যাওয়ার আগেই তালুবন্দি করেন মুমিনুল হক। ফলে ৩৩ রানে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের ইনিংসের।
এই উইকেট পাওয়ার স্বস্তি পরের দুই সেশনে মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রথম সেশনে এই একটিই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা রান তোলে ১০৫। পরের সেশন তো আরও দুর্দান্ত ছিল অতিথিরা।
দুই ব্যাটার মিলে দ্বিতীয় জুটিতে পুরো সেশন তুলোধুনো করেন বাংলাদেশি বোলারদের। পাঁচ বোলার দিয়েও প্রোটিয়া দূর্গ ভাঙতে পারেনি স্বাগতিকরা। উল্টো টনি ডি জর্জি নিজেও চলে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে। এই সেশনেই জর্জি সেঞ্চুরি তুলে নেন। ১৪৬ বলে শতকের দেখা পান জর্জি। এই সেশনে এই জুটিতে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭ ওভারে তোলে ৯৬ রান। মোট এক উইকেটে ২০৫ নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে প্রোটিয়াদের রান এসেছিল ১০৫। দ্বিতীয় সেশনে ২৭ ওভারে বিনা উইকেটে ওঠে ৯৬ রান।
দুইশত রান ছাড়ানো প্রোটিয়ারা দিনের শেষ সেশনে পেরিয়ে যায় তিনশ’র ঘর। এই সেশনে এসে শতকের দেখা পেয়ে যান স্টাবস। মুমিনুল হকের বলে কাট করে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টাবস। শতক ছুঁতে স্টাবস খেলেছেন ১৯৪ বল। হাঁকিয়েছেন পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কা।
অথচ জর্জি ও স্টাবস দুজনের ইনিংস শুরুতেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু দুজনকেই জীবন দেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। দিনের শুরুতে সকালে ৬ রানে টনি ডি জর্জির ক্যাচ মিস করেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। এরপর অভিষিক্ত এই কিপার পরে ২৫ রানে স্টাম্পিং করতে পারেননি স্টাবসকে।
অবশেষে তৃতীয় সেশনে এসে শতরান ছোঁয়া এই স্টাবসকে ফিরিয়েই জুটি ভাঙে বাংলাদেশ। এবারও দৃশ্যপটে তাইজুল। দিনের শেষ সেশনে একটু জোরের ওপর শর্ট অব লেংথ বল করেন তাইজুল। স্টাবস চেষ্টা করেন জায়গা বানিয়ে মোকাবিলা করতে, পারেননি। হাঁটুর নিচে থাকা বল ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। কিছুই করার ছিল না স্টাবসের। হতাশ হয়ে ১০৬ রানে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ভাঙে প্রোটিয়াদের ২০১ রানের ইনিংস।
সতীর্থ ফিরলেও উইকেট আকড়ে ছিলেন জর্জি। দিনের বাকি সময় ডেভিড বেডিংহ্যামকে নিশ্চিন্তে পার করে দেন তিনি। তার ব্যাটে চড়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম দিনে স্রেফ উইকেটের দেখা পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ১০২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন। হাসান মাহমুদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানাদের দিন কাটে উইকেট শূন্যতায়।