আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত ও আইসিসি

আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের আরগুন জেলায় পাকিস্তানের করা একটি ভয়াবহ হামলায় তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার মারা গিয়েছে। যে কারণে আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। হামলার ঘটনার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আফগানিস্তানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।
এসিবি এই হামলাকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যা দিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সরকার এসিবির দাবিকে বিতর্কিত অভিযোগ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দাবি করেছে যে, কোনো ক্রিকেটাররা বিমান হামলায় মারা গেছেন — এ ব্যাপারে কোনো স্বাধীন যাচাই নেই।
গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ -এ দেওয়া এক বিবৃতিতে এসিবি জানায়, আরগুন জেলায় হামলার ঘটনায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটারও রয়েছেন। তারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শরানা থেকে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ঘটনাকে আমরা আফগানিস্তানের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য, খেলোয়াড়দের জন্য এবং পুরো ক্রিকেট পরিবারের জন্য বড় ক্ষতি বলে মনে করি।’
এসিবি এই ঘটনাকে ‘বেদনাদায়ক’ উল্লেখ করে বলেছে, ‘ভিকটিমদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এসিবির সিদ্ধান্তের পরদিন আইসিসি ও বিসিসিআই পৃথক বিবৃতি দিয়ে তাদের সমবেদনা ও সংহতি প্রকাশ করে।
আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে সাম্প্রতিক এক বিমান হামলায় সম্ভাবনাময় তিন তরুণ আফগান ক্রিকেটার — কবীর আঘা, সিবগাতুল্লাহ ও হারুন — এর মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক ও স্তম্ভিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইসিসি। এই তিন তরুণ একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পথে হামলার শিকার হন। একই ঘটনায় আরও কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও প্রাণ হারান। এই সহিংস হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, যা পরিবার, সমাজ এবং পুরো ক্রিকেট বিশ্ব থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তিনটি উজ্জ্বল প্রতিভাকে — যাদের একমাত্র স্বপ্ন ছিল ভালোবাসার খেলাটি খেলা। আইসিসি আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে এবং এই দুঃখজনক ঘটনার শোক তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।’
বিসিসিআই তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই দুঃখজনক সময়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, ক্রিকেট মহল ও নিহত খেলোয়াড়দের পরিবারের প্রতি বিসিসিআই গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। এই ভয়াবহ হামলার তীব্র প্রতিবাদ করছে। তরুণ প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদদের এমন মৃত্যু কেবল হৃদয়বিদারকই নয়, বরং অত্যন্ত উদ্বেগজনকও। আফগানিস্তানের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি রইল।’
শনিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এক্সে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান নিজেই সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদের প্রধান শিকার। আইসিসি যে মন্তব্য করেছে তা পক্ষপাতদুষ্ট, অসম্পূর্ণ এবং বিতর্কিত অভিযোগকে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তিন আফগান ক্রিকেটার বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন—এই দাবির কোনো স্বাধীন যাচাই উপস্থাপন করেনি আইসিসি। পাকিস্তান এই ভুল ব্যাখ্যার কঠোর প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে সংশোধনের আহ্বান জানায়।’
আইসিসির বিবৃতির পর, আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করে আইসিসির সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ‘এসিবি সবসময় রাজনীতি থেকে খেলাধুলাকে আলাদা রাখার নীতিতে বিশ্বাসী এবং আইসিসির কাঠামোর ভেতরেই এই অবস্থান বজায় রেখেছে। আমরা আবারও এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। আইসিসির সংহতির প্রকাশের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি—এই অমানবিক হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
পিসিবির আয়োজনে পাকিস্তানের মাটিতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। সিরিজটি ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যেখান থেকে ইতোমধ্যে সড়ে দাঁড়িয়েছে আফগানিস্তান।
এই সিরিজে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দুটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল—১৭ ও ২৩ নভেম্বর। আফগানিস্তানের পরিবর্তে এখন এই ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নিবে জিম্বাবুয়ে।