কাছে গিয়ে আবারও স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

এক ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৯ রান। হাতে পাঁচ উইকেট। ক্রিজে আছেন ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার বোলারদের শাসন করা নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশের জয়ই দেখছিল সবাই। বাংলাদেশ অধিনায়ক নন, পাশার দান উল্টেছেন লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু। চার বলে চার উইকেট তুলে শেষ করে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। অধিনায়কের হাত ধরে শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ৭ রানের নাটকীয় জয়।
মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে সোমবার (১৯ অক্টোবর) টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় শ্রীলঙ্কা। ৪৮.৪ ওভারে ২০২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৫ রানে থামে বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ২ রানে বিদায় নেন রুবিয়া হায়দার। কোনো রান না করেই আউট হন তিনি। আরেক ওপেনার ফারজানা হক পিংকি ৩৫ বলে ৭ রানের মন্থর ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। ১৩ বলে ৮ রান করে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে সোবহানা মুস্তারি ফিরলে ৪৪ রানে তিন উইকেটে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন শারমিন আক্তার সুপ্তা ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার দেখেশুনে টেনে নিচ্ছিলেন দলকে। সুপ্তা পূর্ণ করেন ফিফটি। এই জুটিতে যখন ৮২ রান আসে, চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন সুপ্তা। ১০৩ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৬৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। সুপ্তা চলে গেলে স্বর্ণা আক্তারকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন জ্যোতি। এই জুটিতে আসে ৫০ রান।
২৭ বলে ১৯ রান করে স্বর্ণা ফিরলে হঠাৎই যেন খেয় হারায় বাংলাদেশ। বাড়ে রানরেটের চাপ। সেই চাপ শেষ ওভারে ঠেকে ৯ রানে। তবু, আশা ছিল। কে জানত, আতাপাত্তুর স্পিনে এভাবে কাত হবে বাংলাদেশ।
লঙ্কান অধিনায়ক আতাপাত্তু শুরু করেন রাবেয়া খানকে দিয়ে। তাকে ফেলেন লেগবিফোরের ফাঁদে। পরের বলে নাহিদা আক্তার পড়েন রানআউটের খপ্পরে। আশার প্রদীপ হয়ে থাকা জ্যোতির আলো নিভে যায় সিলভার হাতে ধরা পড়ে। সাজঘরে ফেরার আগে নামের পাশে অবশ্য জ্বলজ্বল করছিল ৯৮ বলে ৬ চারে খেলা ৭৭ রানের ইনিংস। চতুর্থ বলে মারুফা আক্তার হন লেগবিফোর। চার বলে চার উইকেট হারিয়ে কিছু আর বাকি থাকে না। সুপ্তা নামলেও শেষ দুই বলে এক রানের বেশি আসেনি।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে আতাপাত্তু নেন চার উইকেট। দুই উইকেট পান সুগান্দিকা কুমারি।
টস হেরে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম বলেই সাফল্য এনে দেন মারুফা আক্তার। এই পেসারের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়েন লঙ্কান ওপেনার ভিস্মি গুণারত্নে। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন গুণারত্নে। অপর ওপেনার চামারি আতাপাত্তু অবশ্য খেলেন আধিপত্য বিস্তার করে।
রাবেয়া খানের বলে লেগবিফোর হওয়ার আগে ছয়টি চার ও দুটি ছক্কায় লঙ্কান অধিনায়ক করেন ৪৩ বলে ৪৬ রান। ওয়ানডাউনে নামা হাসিনি পেরেরার সঙ্গে ৭২ রানের জুটি গড়েন আতাপাত্তু। তিনি বিদায় নিলেও পেরেরা একপ্রান্ত আগলে রাখেন। শাসন করেন বাংলার বোলারদের। স্বর্ণা আক্তারের বলে হাসিনিও লেগবিফোর হন। এর আগে ১৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৯৯ বলে ৮৫ রান করেন।
এই দুজন ছাড়া লঙ্কান ইনিংসে বলার মতো রান করেছেন কেবল নিলাক্ষিকা সিলভা। ৩৮ বলে ৩৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। কাটা পড়েন স্বর্ণার ডেলিভারিতে। নিলাক্ষির বিদায়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং। দ্রুত পতন ঘটে উইকেটের। লঙ্কানরা শেষ ৬ উইকেট হারায় ২৮ রানে।
বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভারে চার মেডেনসহ ২৭ রানে তিন উইকেট নেন স্বর্ণা। রাবেয়া পান দুই উইকেট। মারুফা, নিশি ও নাহিদার নামের পাশে যোগ হয় একটি করে উইকেট।