করোনাজনিত জ্বর, কাশি থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন
এই সময়ে সাধারণ সর্দি-জ্বরের পাশাপাশি কোভিড-১৯ রোগ বিশ্বের মানুষের জন্য বড় আতঙ্কের বিষয়। কারণ এর কোনো সঠিক চিকিৎসা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। ঋতু বদলের ইঙ্গিতেও সেটা বেশ স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে| আচমকা তাপমাত্রার হেরফের হলেই সর্দি-কাশির মতো একটা সমস্যায় ভুগতে আরম্ভ করছি আমরা সবাই। সর্দি-জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথা দিয়ে রোগ শুরু হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরবর্তী পর্যায়ে বমি, পাতলা-পায়খানা, ভীষণ শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে আইসিইউতে থেকেও অনেক রোগীই মারা যাচ্ছে । এ পরিস্থিতিতে আমরা সবাই ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।
আমাদের শরীর যখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিউকাস তৈরি করে, তখনই বাড়তি মিউকাস নাক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, সেটাকেই আমরা বলে থাকি 'নাক দিয়ে পানি পড়া’' যা সাধারণ সর্দি-জ্বরেও হয় আবার কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও তা হয়ে থাকে ।
প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ সর্দি-জ্বর থেকে কোভিড-১৯ কে পার্থক্য করা বেশ কষ্টের। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী উপায় উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এবং হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামেন নেতৃত্বে একদল গবেষক। গবেষক দলে আছেন পিএইচডি শিক্ষার্থী ডা. মো. আসির উদ্দিন, ডা. মো. মুখলেছুর রহমান ও ডা. মো. এনামুল হক।
পদ্ধতি অনুসরণের সঠিক নিয়মাবলী
১। প্রথমে একটি চায়ের কাপে অথবা একটি ছোট সাইজের প্লাস্টিক মগে ৬০ মিলি ফুটন্ত গরম পানি ঢালুন। তারপর এতে অ্যাসিটোন ফ্রি খাঁটি ঘন ৪০ মিলি ইথানল (ইথাইল অ্যালকোহল ৯৯.৯%) ঢেলে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত নাক দিয়ে ওই বাষ্প টানতে থাকুন।
২। ইথানল বাষ্প টানার ঠিক ১০-১৫ মিনিট পর ২৫ মিলি স্বাভাবিক পানিতে ২৫ মিলি ৬০ শতাংশ ইথানল মিশিয়ে ৩০ সেকেন্ড কুলকুচি/গড়গড়া দিনে তিন-চার বার করবেন। প্রতিবার স্বাভাবিক পানি দিয়ে গড়গড়া করার চার-পাঁচ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে হাল্কা কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলবেন।
৬০ শতাংশ ইথানল তৈরির প্রক্রিয়া যা বাসায় বসে করতে পারেন : ১০ মিলি প্লাস্টিক সিরিঞ্জ দিয়ে অ্যাসিটোন ফ্রি খাঁটি ঘন (৯৯.৯%) ইথানল ছয় বার অর্থাৎ মোট ৬০ মিলি একটি পানির খালি বোতলে ঢেলে নিন। এর পর ১০ মিলি সিরিঞ্জ দিয়ে চারবার অর্থাৎ ৪০ মিলি মিনারেল ওয়াটার ঢেলে ভালোভাবে মিশিয়ে স্টক সলিউশন বানিয়ে সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখুন। ইথানল মিশ্রিত পানি অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাহিরে রাখুন।
৩। যদি শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে দিনে তিনবার প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রাম চার-পাঁচ দিন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
৪। প্রতি আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিন থেকে চার দিনের জন্য আদা ও দারুচিনি মিশ্রিত গরম পানি পান করুন।
৫। যারা অ্যাজমা/ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নেবুলাইজার (সুলপ্রেক্স) এবং অন্যান্য চলমান চিকিৎসার সাথে সাব-ক্লিনিকাল ফ্লু/কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হলে ইথানলে কোনো এলার্জি না থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইথানল বাষ্প ইনহেলেশন বা কুলকুচি করতে পারেন।
ইথানল বাষ্পের ইনহেলেশন এবং কুলকুচি কিভাবে আরএনএ ইনভেলপড ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে?
আরএনএ ভাইরাস ধ্বংসে ইথানল বাষ্প যেভাবে কাজ করবে :
আমরা জানি সাধারণ ফ্লু ভাইরাস (ইনফ্লুয়েঞ্জা গোত্রের), SARS-CoV-1, MERS-CoV এবং SARS-CoV-2 (কোভিড-১৯) ছাড়াও অন্যান্য করোনাভাইরাস যদি এরা সিঙ্গেল স্ট্রান্ডেড আরএনএ ভাইরাস হয় তাহলে এদের সবার ইনভেলপেও লিপিড জাতীয় পদার্থ থাকবে। ভাইরাসসমূহের ওই সব লিপিড ইথানল দ্বারা ট্রিটমেন্ট করলে দ্রুত ১-২ মিনিটের মধ্যে সহজেই ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে। যার ফলে ইথানল বাষ্প ইনহেলেশন করলে শ্বাসতন্ত্রের পর্দার সঙ্গে লেগে থাকা সব মুক্ত ভাইরাস স্বল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হবে। গবেষণায় দেখা যায়, তিন থেকে চার দিনের জন্য ইথানল বাষ্পের ইনহেলেশন এবং হালকা গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করলে সাধারণ ফ্লুসহ শ্বাসতন্ত্রের অন্য যে কোনো ইনভেলপড আরএনএ ভাইরাস ১০০ শতাংশ কার্যকরীভাবে ধ্বংস হয়।
ইথানল মিশ্রিত কুসুম গরম পানির কুলকুচি যেভাবে কাজ করবে :
ইথানল একাই আরএনএ ইনভেলপড ভাইরাসগুলোর লিপিড পদার্থ সহজেই ধ্বংস করতে যথেষ্ট। এ ছাড়া প্রদাহজনিত কারণে গলা ব্যথার ক্ষেত্রে উক্ত এলাকার কোষগুলো থেকে সাময়িকভাবে জলীয় পদার্থও শোষণ করবে। যার ফলে প্রদাহ কমে যাবে এবং ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। সেই ক্ষেত্রে রোগীরা ভীষণ আরাম বোধ করবে। যদি দু-একদিন কুলকুচি করলেই ব্যথা চলে যায় তাহলে আর কুলকুচি করার প্রয়োজন নেই । তবে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে দুই দিনে ব্যথা না কমলে আরো এক-দুইদিন করাই ভালো।
কারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করবেন ?
জ্বর, গুরুতর গলা ব্যথা, নাক দিয়ে সর্দি পড়া, নাকে জ্বালা-পোড়া করা এবং মাথা ব্যথার রোগীরা (মৌসুমী ফ্লু বা কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলোর প্রাথমিক প্রকাশ) যারা সাধারণ সর্দি-জ্বর/কোভিড-১৯ এর সাব-ক্লিনিকাল ক্যারিয়ার হিসেবে সন্দেহজনক অবস্থায় রয়েছেন অথচ যত্রতত্র অবাধে ঘোরাফেরা করে সাধারণ ফ্লু বা কোভিড-১৯-এর ভাইরাস অনায়াসে অন্যদের মধ্যে ছড়াচ্ছেন ওই সব ব্যক্তিগণ এবং ১২ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
অযথা হাসপাতালে ভিড় না করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত অসহায় না ভেবে সুস্থ থাকুন এবং অন্যকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন।