ফ্রিল্যান্সিং শিখুন
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের বিভিন্ন ধরন
আলামিন চৌধুরী ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন ২০০৪ সালে। বর্তমানে তিনি বেসিসের অঙ্গসংগঠন বিআইটিএমের প্র্যাকটিক্যাল এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের লিড ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেট মার্কেটিং প্রফেশনাল। বিশ্বের বিভিন্ন ইন্টারনেট মার্কেটিং ফোরামের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি।
আলামিন চৌধুরী ২০১১ সালে বেসিস আয়োজিত ‘বেস্ট ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৩-১৪ বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের একজন জুরি বোর্ড মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি) কর্মসূচির প্র্যাকটিক্যাল এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং—এ তিনটি ট্র্যাকের ট্রেনিং কার্যক্রম তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।
এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রতি সোমবার নিয়মিত লিখছেন আলামিন চৌধুরী
গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম ‘কীভাবে শুরু করবেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’ নিয়ে বিস্তারিতভাবে, আর আজ আলোচনা করব এর খুঁটিনাটি এবং কাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এসইওকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে :
১. অর্গানিক এসইও
একজন ইউজার যখন কোনো সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন : গুগল, ইয়াহু, বিং) কোনো কি-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করেন, তখন সে দুই ধরনের সার্চ রেজাল্ট দেখতে পায়, একটি হচ্ছে অর্গানিক সার্চ রেজাল্ট এবং অপরটি হচ্ছে পেইড সার্চ রেজাল্ট। নিচের চিত্রের দিকে লক্ষ করলে আরো স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।
আপনার সাইট যদি সঠিকভাবে অপটিমাইজ করা থাকে এবং এর কন্টেন্ট যদি মানসম্মত হয়, তাহলে সার্চ রেজাল্ট পেজের অর্গানিক/ফ্রি রেজাল্টের লিস্টিংয়ে আপনার সাইটটি র্যাঙ্কিংয়ে আসবে। আর এ ক্ষেত্রে আপনাকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না, কারণ এগুলো হচ্ছে ফ্রি লিস্টিং, যা সঠিকভাবে আপনার সাইটের গুণগত মানের (সঠিক এসইও) কারণে নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের জন্য র্যাঙ্কিংয়ে আসবে। আর এটিই সর্বোত্তম। এভাবে র্যাঙ্কিংয়ে এলে আপনি আপনার সাইটের জন্য কাঙ্ক্ষিত ভিজিটর পাবেন, যা কি না টার্গেটেড ভিজিটর হিসেবেও পরিচিত।
২. পেইড এসইও বা পিপিসি (Pay Per Click) Advertisement
এই প্রক্রিয়া একটু ব্যয়বহুল। এখানে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের জন্য সার্চ ইঞ্জিনের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোয় ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। যেমন : গুগলের Google Adwords এবং Microsoft-এর Bing Ads। ক্যাম্পেইন রান করানোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের জন্য আপনার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে পারবেন।
ইউজার প্রতিটি কি-ওয়ার্ডে ক্লিক করলে আপনার ক্যাম্পেইনে সেট করা অর্থ থেকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। সাধারণত অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য/সেবাদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে এ ধরনের পেইড এসইও বা পিপিসি করে থাকে। এতে করে তারা তাদের ব্যবসার জন্য ভিজিটর লাভের পাশাপাশি তাদের ব্যবসায়িক প্রচারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজকের পর্বে আমরা অর্গানিক এসইও নিয়ে আলোচনা করব। কেননা, এটিই সবচেয়ে ভালো উপায় একটি সাইটকে র্যাঙ্কিংয়ে আনার জন্য, আর নতুনদের জন্য এসইওর শুরুটা অর্গানিক এসইও দিয়েই হয়। ওপরের চিত্রের দিকে লক্ষ করলে দেখবেন যে, অর্গানিক এসইও দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে—অন-পেজ এসইও এবং অফ-পেজ এসইও। দুটি ধাপই সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে র্যাঙ্কিংয়ে আসতে হলে এই পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করেই আসতে হবে।
অন-পেজ বলতে একটি পেজকে সার্চ ইঞ্জিনের সব নিয়মনীতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে তৈরি করাকে বোঝায়। আরো সহজভাবে বললে, সাইটের ওয়েবমাস্টার/মালিক তার পেজের মধ্যে যে কাজগুলো করে থাকে, সেগুলোর সমষ্টিকে বোঝায়।
এবার তাহলে আমরা একটু খেয়াল করে দেখি যে, একটি পেজে আমরা কী কী কাজ করে থাকি বা কী কী নিয়মনীতি অনুসরণ করা উচিত। নিচে আমি অন-পেজের বিভিন্ন অংশকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরছি :
টাইটেল ট্যাগ
টাইটেল একটি পেজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা একটি পেজে কী আছে, তা এর টাইটেল পড়লেই বুঝতে পারি। আপনার পেজের টাইটেল/শিরোনাম যত ভালো বা দৃষ্টিগোচর হবে, আপনার পেজে ভিজিটরের সংখ্যাও তত বেড়ে যাবে। ভিজিটর আপনার পেজে আসবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে এই টাইটেল/শিরোনামের ওপরে।
মেটা ডেসক্রিপশন ট্যাগ
এই ট্যাগও খুবই দরকারি। সার্চ ইঞ্জিনে একটি পেজকে র্যাঙ্কিংয়ে নিয়ে আসার জন্য এই মেটা ডেসক্রিপশন অংশের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভিজিটর একটি পেজের মেটা ডেসক্রিপশন পড়েই সেই পেজটিতে বিস্তারিত কী নিয়ে লেখা আছে, সেই কন্টেন্ট সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকেন। তাই এ অংশে আপনি আপনার পেজের সংক্ষিপ্ত একটি বর্ণনা বা সারমর্ম দিয়ে থাকেন এবং আপনি চাইলে আপনার মেইন কি-ওয়ার্ডগুলোকেও এর মধ্যে উল্লেখ করতে পারবেন।
মেটা কি-ওয়ার্ড
বর্তমানে এই অংশ ততটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না। কারণ, আপনি এ অংশে আপনার টার্গেটেড কি-ওয়ার্ডগুলোকে উল্লেখ করে দিতে পারেন; কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন এগুলোকে আর পেজ লেভেল র্যাঙ্কিংয়ে ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করে না।
হেডার ট্যাগ
এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। হেডার ট্যাগ মোট ছয়টি (H1-H6)। কিন্তু আমরা সাধারণত একটি পেজের মধ্যে H1, H2 ও H3 এই ট্যাগ তিনটিকেই ব্যবহার করে থাকি।
পারমালিংক/URL Structure
আপনার পেজকে সার্চ ইঞ্জিন একটি ভালো অবস্থানে আনার জন্য পারমালিংক অপটিমাইজেশন করা খুবই দরকার। কেননা, আপনি চাইলে পারমালিংকে আপনার মেইন কি-ওয়ার্ড দিতে পারবেন এবং এর গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়াতে পারবেন।
অ্যাঙ্কর টেক্সট
সঠিকভাবে অ্যাঙ্কর টেক্সট বসাতে পারলে এটি আপনার পেজ র্যাংকিং আরো বাড়িয়ে দেয়। অ্যাঙ্কর টেক্সট হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে এক বা একগুচ্ছ শব্দের সঙ্গে একটি লিংক জুড়ে দিয়ে এই শব্দকে ক্লিকেবল/হাইপারলিংক করা হয় এবং যখন কোনো ইউজার এই শব্দের ওপরে ক্লিক করে, সে তখন ওই লিংক করা পেজে চলে যায়।
ইন্টারনাল লিংক
আপনার সাইটের একটি পেজের সঙ্গে অপর একটি পেজের বিষয়বস্তুর মিল রেখে যে লিংক তৈরি করা হয়, তাকে ইন্টারনাল লিংক বলে। এটি আপনার সাইটের দুটি পেজের মধ্যে হয়ে থাকে এবং অ্যাঙ্কর টেক্সটের মাধ্যমে সাধারণত এ লিংক করা হয়।
ইমেজ অপটিমাইজেশন
বর্তমান সময়ে ইমেজ অপটিমাইজেশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার পেজের ট্রাফিক কতক্ষণ থাকবে বা কী পরিমাণ সময় তারা আপনার পেজে থাকবে, এ বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে ইমেজের ওপরও নির্ভর করে। আপনার ইমেজ যদি সঠিকভাবে কন্টেন্টের সঙ্গে মিল রেখে দেওয়া হয়ে থাকে, তবে এই পেজের বাউন্স রেট কমে আসবে আর পরে হয়তো ইমেজ সার্চ রেজাল্ট পেজেও আপনার ইমেজটি ভালো র্যাঙ্কিংয়ে চলে আসতে পারে, যা আপনাকে টার্গেটেড ভিজিটর পেজে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
কি-ওয়ার্ডের LSI ভার্সন
আপনি আপনার পেজের মান বাড়াতে বারবার একই কি-ওয়ার্ড ব্যবহার না করে এর LSI ভার্সন, অর্থাৎ সিনোনিমাস কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার পেজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। যেমন আপনার মূল কি-ওয়ার্ড যদি হয়ে থাকে ‘food’, তাহলে আপনার লেখার মধ্যে বারবার ‘food’ শব্দটি না লিখে কখনো ব্যবহার করুন ‘meal’, ‘cuisine’ ইত্যাদি।
বড় কন্টেন্ট লেখা
আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন আপনার পেজের কন্টেন্ট যেন তথ্যসংবলিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ একজন ইউজার যেন পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারে, আপনার লেখায় আপনি কী বলতে বা বোঝাতে চাইছেন। তাই কন্টেন্ট বিস্তারিতভাবে লিখুন। সাধারণত ৮০০-১২০০ শব্দের মধ্যে আপনার কন্টেন্ট লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সোশ্যাল মিডিয়া বাটন
আপনার পেজে সব সময় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার বাটন রাখুন। কারণ, একজন ভিজিটর যেন চাইলেই আপনার পোস্টটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারে। এতে আপনার সাইটের প্রচার এবং ভিজিটর, দুই-ই বাড়বে।
সাইট ম্যাপ
সাইট ম্যাপ আপনার ইউজারকে বুঝতে সাহায্য করে যে, তারা সাইটের কোথায় গেলে কী পাবে বা কীভাবে কাঙ্ক্ষিত পেজ খুঁজে পাবে। আবার এটি সার্চ ইঞ্জিনকেও সাহায্য করে আপনার পেজগুলোকে সঠিকভাবে ইনডেক্স করতে। তাই আপনার সাইটের সাইট ম্যাপ থাকাটা খুবই দরকার।
পেজ লোডিং স্পিড
আপনার পেজ যত দ্রুত লোড হবে, এটি আপনার সাইটে এবং ভিজিটরের জন্য ততই ভালো। কেননা, একজন ইউজার একটি পেজ লোড হতে কখনই ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় অপেক্ষা করবে না এবং পেজটি লোড হতে যত বেশি সময় নেবে, ভিজিটর ততই বিরক্ত হবেন। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন, পেজের অভ্যন্তরীণ কন্টেন্ট সঠিকভাবে স্থাপন করতে এবং পেজ লোডিং স্পিড যত সম্ভব কম রাখতে।
মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার
বর্তমান সময়ে ভিজিটর আপনার পোস্টে মাল্টিমিডিয়া প্রপার্টিজ বেশি পছন্দ করেন। মাল্টিমিডিয়া প্রপার্টিজ বলতে এই ধরুন পোস্টের ভেতরে যদি আপনার কন্টেন্টের সঙ্গে রিলেটেড ইমেজ বা ভিডিও থাকে সেটা। আপনি অনেক সময় পোস্টের ভেতরে ইনফোগ্রাফিক, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির ব্যবহার করেও আপনার ভিজিটরদের আকৃষ্ট করতে পারেন। তাই যদি সম্ভব হয় পেজে মাল্টিমিডিয়া প্রপার্টিজ ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার পোস্টটি আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে আর আপনার পোস্টটি ভিজিটররা বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করবে।
Robots.txt
এটি খুবই জরুরি একটি টেক্সট ফাইল, যেখানে বিভিন্ন কমান্ড লেখার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন রোবটকে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এখান থেকে কমান্ড ব্যবহার করে যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন রোবটকে আপনার পেজে আসা থেকে বিরত রাখতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে SEO-এর কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে :
• Keyword/Market Research
• Competition Analysis
• Website SEO Audit
• Backlink Profile Audit
• On-page Optimization
• Off-page Optimization (Link Building)
আপনি চাইলে ওপরের যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। তবে যে বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইছেন, সে বিষয় সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান নিয়ে তার পর কাজ শুরু করুন।
যেমন : যদি আপনি Keyword Research নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে বর্তমান বাজারে এর প্রচুর কাজ রয়েছে। আপনি চাইলে এর মাধ্যমেও আপনার SEO ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন।
আগামী পর্বে পড়ুন :
এসইওর খুঁটিনাটি এবং কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র। ছাপা হবে ১৯ অক্টোবর, সোমবার।
আপডেট থাকুন
আপডেট থাকতে এনটিভির ভেরিফায়েড পেজে লাইক দিন : www.facebook.com/ntvdigital
শুধু প্রযুক্তির খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন : www.facebook.com/ntvtech