উচ্চতার সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক!
অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি! পক্ষান্তরে যাঁরা লম্বা, তাঁদের এই ঝুঁকি কম। ব্রিটেনের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমন দাবি করেছেন। দুই লাখ মানুষের ডিএনএর (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) ওপর গবেষণা চালিয়ে তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন। ডিএনএর যে অংশগুলো উচ্চতা ও হৃদযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলোর ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গড় উচ্চতা থেকে প্রতি ২ দশমিক ৫ ইঞ্চি উচ্চতা কম হলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ে।
তবে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, কম উচ্চতার মানুষের চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। প্রত্যেক মানুষের একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যে হৃদরোগেই বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগে উচ্চতার একটি ভূমিকা রয়েছে—আজ থেকে ৫০ বছর আগেই এ ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু গবেষকরা এর কারণ জানতে পারেননি।
অনেকের ধারণা, শিশুকালে অপুষ্টি উচ্চতা বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে এবং হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গবেষণায় দেখা গেছে, এই কারণ আরো গভীরে, আমাদের ডিএনএর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। গবেষকরা উচ্চতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৮৯টি জিন বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, গড় উচ্চতা থেকে প্রতি ২ দশমিক ৫ ইঞ্চি উচ্চতা কম হওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আবার গড় উচ্চতা থেকে একই পরিমাণ উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে একই হারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার নিলেশ সামানি বিবিসিকে বলেন, ‘ধূমপান এই ঝুঁকি ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। তবে কম উচ্চতার মানুষের বড় কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে—এ কথা আমি বলব না। কারণ, আপনি যদি ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতারও হন, তবু আপনাকে ধূমপান ছাড়তে হবে।’
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যে জিনগুলো উচ্চতা কমানোর জন্য দায়ী, সেগুলো রক্তে কোলেস্টেরল ও চর্বি বৃদ্ধি করে। গবেষকদের বিশ্বাস, উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক জিনগুলো রক্তের ধমনিকে সবল করে।
এ ছাড়া একই সঙ্গে উচ্চতা ও হৃদযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি ডিএনএ লিংকও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
প্রফেসর সামানি আরো বলেন, এটিও মনে রাখা দরকার, লম্বা হলেই সবকিছু ভালো নয়। কারণ, লম্বা মানুষ আবার ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক প্রফেসর পিটার উইসবার্গ বলেন, এ গবেষণার ফলাফলে কম উচ্চতার মানুষকে তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হতে বলা হয়নি এবং চিকিৎসকদের শুধু কম উচ্চতার মানুষের দিকেই নজর দিতে বলা হয়নি; বরং প্রত্যেকেরই উচিত তাদের উচ্চতা অগ্রাহ্য করে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান ত্যাগ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা।