চুল ছিঁড়লে চুল বাড়ে!

জোর দিয়ে টেনে চুল তোলা হলে সেখানে নতুন ভাবে আরো বেশি করে চুল গজায়। তবে চুল টেনে ওঠানোর ক্ষেত্রে জোরের মাত্রাটি হতে হবে মাঝামাঝি। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক।
গবেষকরা বলেন, কোন কারণে শরীর কতটা আঘাত পেয়েছে, এর ওপর নির্ভর করেই এর প্রতিক্রিয়া হয়। মাঝারি মাত্রায় জোর দিয়ে চুল ওঠানো হলে এর প্রতিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেশি চুল গজায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল টেনে ওঠানোয় বাড়তি চুল ওঠার বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যকর। তবে এ থেকে মানুষের টাকের চিকিৎসায় কোনো পদ্ধতি বা ওষুধ আবিষ্কার করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক চুল ওঠানো ও নতুন চুল গজানোর মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। এ-সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল জার্নাল’।
জোরপূর্বক চুল ওঠার ফলে চুল গজানোর গবেষণাটি ইঁদুরের ওপর চালানো হয়। গবেষকরা ইঁদুরের ২০০ চুল তুলে সেখানে এক হাজার ৩০০টি চুল গজাতে সক্ষম হন।
গবেষকরা প্রথমে ইঁদুরের শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে খুব কম শক্তি প্রয়োগ করে বৃত্তাকারভাবে চুল তুলে ফেলেন। ওই স্থানে তেমন কোনো চুল গজাতে দেখা যায় না। পরে মাঝারি মাত্রার শক্তি খরচ করে ইঁদুরের শরীরের একটি স্থানের পাঁচ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার অংশ থেকে ২০০ চুল তুলে টেনে তোলা হয়। ওই বৃত্তাকার অংশে এক হাজার ৩০০ নতুন চুল গজায়। তবে বেশি জোর প্রয়োগ করে চার মিলিমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার অংশ থেকে চুল উঠিয়ে সেখানে ৭৮০টি নতুন চুল পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তুলে ফেলা চুলের সমানসংখ্যক চুল পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, মাঝারি মাত্রার শক্তি প্রয়োগ করে চুল তুলে ফেলায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চুল গজিয়েছে।
গবেষকরা বলেন, টেনে চুল তোলার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি ব্যয়ে চামড়ার নিচে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রদাহ হয়। এই প্রদাহ আমাদের পরিপাক প্রক্রিয়ায় সংকেত পাঠায়। এভাবে চুল ওঠানোর প্রদাহ নির্দিষ্ট করে কী পরিমাণ চুল গজাবে।
গবেষকরা সহজ করে এভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন, প্রতিটি চুলের একটি করে ভোট আছে ধরা হোক। এই ভোটই নির্ধারণ করে পরবর্তীতে কী ঘটবে। যখন চামড়ার একটি নির্দিষ্ট স্থানের মোট চুলের বেশিসংখ্যককে মাঝারি জোরে উপড়ে ফেলা হয়, তখন বাড়তি চুল গজানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
সারাধণত বিশ্বের পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যেকার অর্ধেকের মাথায়ই টাক দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা আশা করেন, পরীক্ষার তথ্য ব্যবহার করে মানুষের চুল হারানোর অনেক রোগের চিকিৎসায় অগ্রগতি পাওয়া যাবে।
তবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গবেষক ক্রিস ম্যাসনের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের তথ্যকে চমকপ্রদ বলে মনে করলেও এটি মানুষের টাক হওয়া দূরের কতটা কার্যকর হবে প্রশ্নসাপেক্ষ। আর চুল টেনে তোলার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।