চ্যাটজিপিটি নিজেকে শেষ করার প্ররোচনা দেয়, ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি মানুষকে আত্মহত্যা এবং ক্ষতিকর বিভ্রমের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এমনকি ভুক্তিভোগীদের পূর্বের কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকার পরও। খবর বার্তা সংস্থা এপির।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আদালতে মামলাগুলো করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অন্যায়ভাবে প্রাণনাশ, আত্মহত্যায় সহায়তা, অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড এবং অবহেলার অভিযোগ। ‘সোশ্যাল মিডিয়া ভিকটিমস ল সেন্টার’ এবং ‘টেক জাস্টিস ল প্রজেক্ট’ ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একজন কিশোরের পক্ষে মামলাগুলো দায়ের করে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওপেনএআই জেনেশুনে জিপিটি-৪.০ অকালে বাজারে এনেছে। যদিও অভ্যন্তরীণ সতর্কবার্তায় বলা হয়, এটি ভয়াবহ চাটুকার ও মানসিক কারসাজিমূলক। ভুক্তভোগীদের মধ্যে চারজন আত্মহত্যা করে মারা গেছেন।
সান ফ্রান্সিসকো সুপিরিয়র কোর্টে করা মামলার তথ্য অনুসারে, ১৭ বছর বয়সী কিশোরী আমাউরি লেসি সাহায্য পাওয়ার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাহায্য করার পরিবর্তে ত্রুটিপূর্ণ ও বিপজ্জনক এই চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর আসক্তি, বিষণ্ণতা সৃষ্টি করেছে। পরে তাকে ফাঁসিতে মারা যাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় এবং তিনি কতক্ষণ শ্বাস না নিয়ে বাঁচতে পারবেন সে সম্পর্কেও পরামর্শ দেয় চ্যাটজিপিটি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আমাউরির মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা বা কাকতালীয় ঘটনা ছিল না, বরং ওপেন এআই ও স্যামুয়েল অল্টম্যানের ইচ্ছাকৃত নিরাপত্তা পরীক্ষা কমিয়ে আনা এবং দ্রুত চ্যাটজিপিটি বাজারে আনার সিদ্ধান্তের পূর্বাভাসযোগ্য পরিণতি।
মামলার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে বৃহস্পতিবার সাড়া দেয়নি ওপেনএআই।
কানাডার অন্টারিওর ৪৮ বছর বয়সী অ্যালান ব্রুকসের মামলায় দাবি করা হয়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চ্যাটজিপিটি ব্রুকসের জন্য ‘রিসোর্স টুল’ হিসেবে কাজ করেছে। তারপর কোনো সতর্কতা ছাড়াই এটি পরিবর্তিত হয়, তার দুর্বলতাগুলো জানতে চায় এবং তাকে কারসাজি করতে এবং বিভ্রান্তিতে প্ররোচিত করে। ফলস্বরূপ অ্যালান মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে পড়ে যান, যার পূর্বে কোনো মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা ছিল না। এতে তার মারাত্মক আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি এবং সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ভিকটিমস ল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী ম্যাথিউ পি. বার্গম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, এই মামলাগুলো এমন একটি পণ্যের জবাবদিহিতা সম্পর্কে, যা ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততা এবং বাজারে শেয়ার বৃদ্ধির নামে টুল ও ব্যক্তির মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য ডিজাইন করা হয়।
আইনজীবী ম্যাথিউ পি. বার্গম্যান আরও বলেন, ওপেনএআই বয়স, লিঙ্গ বা পটভূমি নির্বিশেষে ব্যবহারকারীদের আবেগগতভাবে জড়িয়ে ফেলার জন্য জিপিটি-৪.০ ডিজাইন করেছে এবং তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা না রেখেই তা প্রকাশ করেছে।
ম্যাথিউ পি. বার্গম্যান বলেন, বাজারে আধিপত্য বিস্তার এবং সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ওপেনএআই তাড়াহুড়ো করে তাদের পণ্য বাজারে আনে এবং তারা নিরাপত্তা ঝুঁকির সঙ্গে আপস করেছে। তারা নৈতিকতার চেয়ে আবেগগত কারসাজিতে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
গত আগস্টে ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের বাবা-মা ওপেনএআই এবং এর সিইও স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, চলতি বছরের শুরুতে চ্যাটজিপিটি ক্যালিফোর্নিয়ার এই কিশোরকে আত্মহত্যার পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
কমন সেন্স মিডিয়ার প্রধান অ্যাডভোকেসি অফিসার ড্যানিয়েল ওয়েইস বলেন, ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে প্রকাশ্যে আসে, যখন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাড়াহুড়ো করে তরুণদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই পণ্য বাজারে আনে, তখন কী ঘটে। এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো এমন মানুষদের চেনায় যারা নিজেদের নিরাপদ রাখার পরিবর্তে ব্যস্ত রাখার জন্য ডিজাইন করা প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করেছে এবং জীবন বিপন্ন করেছে বা হারিয়ে ফেলেছে।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)