দক্ষিণের নদী তেঁতুলিয়া

প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অকৃত্রিম সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতিপ্রেমী ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রীদের জন্য অনেক উপাচারে সাজানো সুজলা-সুফলা এই দেশটি। এখানে অধিক বৃষ্টিপাতের সুফলটা দারুণভাবে উপভোগ করা যায় বর্ষা মৌসুমে। এ মৌসুমে নদী যেন সেজে ওঠে অপরুপ সাজে। তেমনি এক অপরূপ নদী তেঁতুলিয়া।
মেঘনা নদী থেকে প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎপত্তিস্থল ভোলার ইলিশা এলাকা থেকে দক্ষিণে সাগর মুখে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহমান তেঁতুলিয়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, পটুয়াখালীর বাউফল, গলাচিপা ও ভোলার দৌলাতখান, বোরহান উদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেছে।
বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের বগী এলাকায় থেকে একটি শাখা দশমিনা উপজেলার দিকে প্রবাহিত হয়ে বুড়াগৌরঙ্গ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। পটুয়াখালীর বাউফলে ৬০কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তেঁতুলিয়া নদী।

তেঁতুলিয়া মাছ শিকার করে হাজার হাজার মানুষ জীবিকানির্বাহ করে। মিঠা পানির এ নদীর মাছের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। কথিত আছে, তেতুলিয়ার ইলিশ বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু ইলিশ।
বাউফল উপজেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে তেঁতুলিয়ায় মাছ শিকার করে থাকেন। দক্ষিণের জেলা ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালের মানুষে নৌপথে তেঁতুলিয়া হয়ে রাজধানী, চাঁদুপর ও বরিশালে যাতায়াত করে থাকেন।
দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপণ্য এই নদী হয়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। দেশের তৃতীয় বন্দর ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ এর সাথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান নৌরুট হিসেবে তেঁতুলিয়া।
তেঁতুলিয়ার ইতিহাস ও ঐহিত্য
মধ্যযুগীয়, মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয়, পুর্তগীজ, ফিড়িঙ্গি এবং বার্মার বণিকরা বঙ্গোপসাগার হয়ে উত্তরে বরিশাল অঞ্চলে বানিজ্য করতে আসতেন এই তেঁতুলিয়া নদী হয়ে। তেঁতুলিয়ার পাড়ে বণিকরা জাহাজ নোঙর করতেন।
তেঁতুলিয়ার বদৌলতে বর্তমান বাউফল উপজেলার কালাইয়া এলাকায় জাহাজ নোঙর করে তারা ব্যবসা বানিজ্য করতেন। ঐতিহাসিকভাবেই তেতুলিয়া নদী গুরুত্ব বহন করে আসছে।

তেঁতুলিয়ার যৌবনে ভাটা
এক সময়ের প্রবল খরস্রোতা নদী প্রমত্তা তেঁতুলিয়া। বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ ধারণ করত। নদীর ভোলার ভেদুরিয়া, বাউফলের ধুলিয়া, চন্দ্রদ্বীপ, কালাইয়া ও লালমোহন পয়েন্ট অসংখ্যা ছোট বড় চর পড়ে পানি প্রবাহে ভাটা পড়েছে। হারিয়ে গেছে তেঁতুলিয়ার যৌবনকাল। তবে তেতুলিয়া জুড়ে রয়েছে নানা নৈসর্গিক সৌন্দর্য।