‘অচেতন’ কিশোরীকে গণধর্ষণ, ৫ আসামিকে খালাস দিলেন স্পেনের আদালত
স্প্যানিশ আইন অনুযায়ী, কোনো ঘটনায় যখন জোর করে কিংবা ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হবে, তখনই কেবল তাকে ধর্ষণ বলা যাবে। এমনই এক ঘটনায়, অচেতন এক কিশোরীকে গণধর্ষণে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরাজুরি না থাকায় আসামিদের খালাস দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে স্পেনজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ রায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন নারী অধিকারকর্মীরা।
১৪ বছর বয়সী কিশোরীকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন স্পেনের বার্সেলোনার একটি আদালত। আদালতের ভাষ্যমতে, “কিশোরীটি ‘অচেতন অবস্থায়’ থাকায় তার সঙ্গে যা হয়েছে তাতে জোরাজুরি বা হুমকি-ধমকি দিতে হয়নি। ফলে একে ধর্ষণ বলা যাচ্ছে না।’ অথচ এর চেয়ে কম গুরুতর যৌন অপরাধের দায়েও জেল হয়ে থাকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
আদালত বলেছে, ভুক্তভোগী কিশোরী বুঝতে পারছিল না যে তার সঙ্গে কী হচ্ছে। একই সঙ্গে অভিযুক্তরা প্রায় সবাই ওই কিশোরীর সঙ্গে যৌনকর্ম করলেও এর প্রতিবাদ করা বা তাতে সায় দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না কিশোরীটির।
২০১৬ সালের অক্টোবরে স্পেনের কাতালোনিয়ার মনরেসা শহরের একটি পরিত্যক্ত কারখানায় মদ্যপানের সময় ঘটনাটি ঘটে। আইনজীবীরা আদালতে জানান, কিশোরীটি যখন মাতাল ছিল, লোকগুলো তখন কিশোরীর ওপর হামলে পড়ে। এ সময় এদের একজন ব্রায়ান আন্দ্রেস এম অন্যদের উদ্দেশে বলে, ‘এবার তোমার পালা, প্রত্যেকে ১৫ মিনিট করে সময় পাবে, তবে কোনোভাবেই এর বেশি নয়।’
কিশোরীটি এর বেশি কিছু মনে করতে পারছে না। তবে একজন অস্ত্র উঁচিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছিল বলেও মনে পড়ে তার। অভিযুক্তদের সবাই এসব অস্বীকার করলেও কিশোরীর নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসে তাদের একজনের ডিএনএ মিলেছে।
এর আগে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নাভাররার আদালত ১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির দায়ে পাঁচজনকে কারাদণ্ড দেন। ওই তরুণীকে একটি ভবনের সরু গলিতে পেয়ে হামলে পড়ে অভিযুক্তরা। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় ওই তরুণী ‘অনুৎসাহী ও নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন।
পরে গত জুনে স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট ভিন্ন রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাদের কারাদণ্ড ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়েছে। ঘটনাটিকে ‘যৌন হেনস্তা’ এবং আসামিদের ‘ধর্ষক’ আখ্যা দেওয়া হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী গত বছর ধর্ষণবিষয়ক আইন পর্যালোচনায় একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন।