অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট কতটা জনপ্রিয়? মার্কিন ইতিহাস কী বলে?
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে অভিশংসিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হয়েছেন তিনি।
এর আগে আরো দুজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। ১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসন ও ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর কাজে আসেনি। কারণ, প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না।
একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারিত করতে হলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। জনসন বা ক্লিনটনকে অপসারণের পক্ষে সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট না পাওয়ায় ক্ষমতায় থেকে যান দুজনই।
তবে উল্লেখিত দুজনের মধ্যে জনসনকে বেশি ভাগ্যবান বলা যায়। কারণ, সিনেটে এক ভোটের জন্য মেলেনি অ্যান্ড্রু জনসনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে প্রয়োজনীয় দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্ট মার্কিন সংবিধানে উল্লেখিত বিধান অনুযায়ী সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হননি।
জনসন ও ক্লিনটনের অভিশংসন প্রসঙ্গ এলেই আরেক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নাম সামনে চলে আসে। কারণ, প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হওয়ার মুখে পড়েছিলেন তিনিও। কিন্তু এ-সংক্রান্ত ভোটাভুটির আগেই ১৯৭৪ সালে ক্ষমতা ছাড়েন রিচার্ড নিক্সন।
জনসন ও ক্লিনটন অভিশংসিত হওয়ার পর কিংবা নিক্সন পদত্যাগ করার ঘটনায় তাঁদের জনপ্রিয়তায় কী প্রভাব পড়েছিল আর পরবর্তী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে তাঁদের দলের ভাগ্যেই বা কী ঘটেছিল, তা নিয়ে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
অ্যান্ড্রু জনসন কী করেছিলেন?
১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের ১১টি অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, ইতিহাসে তা ‘যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ’ নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথার অবসানে এককভাবে অঙ্গরাজ্যগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, সে প্রশ্নেই শুরু হয়েছিল এই বিবাদ।
গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের (১৮৬৫-১৮৬৯) ডেমোক্র্যাট দলীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের সঙ্গে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে প্রতিনিয়ত বাদানুবাদ হতো দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের পুনর্গঠন কীভাবে হবে, তা নিয়ে।
সে সময়কার ‘কট্টরপন্থী রিপাবলিকান সদস্যরা’ মুক্ত হওয়া দাসদের অধিকার রক্ষায় ছিলেন ব্যাপক সোচ্চার। গৃহযুদ্ধের সময়কার দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছিলেন তাঁরা। কিন্তু রিপাবলিকানদের সব চেষ্টা নস্যাৎ করতে প্রেসিডেন্সিয়াল ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেন জনসন।
জনসনের শাসনকালে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য বিল পাস করে কংগ্রেস। বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রেসিডেন্ট চাইলেই মন্ত্রিসভা থেকে কাউকে বের করে দেওয়ার একক ক্ষমতা হারাবেন। মন্ত্রিসভা থেকে কাউকে বাদ দিতে হলে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কংগ্রেসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকার সুযোগে মন্ত্রিসভার সদস্য ও নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী এডউইন স্ট্যানটনকে বরখাস্ত করেন জনসন। প্রতিবাদে নিজ কার্যালয়ে স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে থাকেন স্ট্যানটন।
স্ট্যানটন বরখাস্ত হওয়ার তিন দিন পর ১৮৬৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জনসনকে অভিশংসিত করতে প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হয়। ভোটে জনসনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৬টি আর বিপক্ষে ভোট দেন ৪৭ জন। ১৭ জন সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন। জনসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ ও খারাপ আচরণের অভিযোগ আনা হয়।
এর পর জনসনকে অভিশংসনে ১১টি অনুচ্ছেদে অভিযোগ এনে তৎকালীন ৫৪ সদস্যের সিনেটে পাঠায় প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা। কিন্তু সিনেটের ভোটাভুটিতে একেবারে কানের পাশ দিয়ে গুলি যায় জনসনের। সিনেটের ৩৫ সদস্য জনসনকে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারণের পক্ষে ভোট দেন। জনসনকে অপসারণের বিপক্ষে ভোট দেন ১৯ জন। ফলে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্টকে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতা থেকে অপসারণে প্রয়োজনীয় দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয় রিপাবলিকানরা।
সিনেটের রায়ের পরিণাম
কেউ কেউ বলেন, সিনেটের রায়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার খবর শুনে কেঁদেছিলেন জনসন এবং নিজের সম্মান পুনরুদ্ধারে নিবেদিত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। তবে তাতে কাজ হয়নি।
প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকার নির্দিষ্ট সময়সীমার পুরোটাই শেষ করতে পারলেও শেষের দিকে আবারও ক্ষমতা নিয়ে টানাহেঁচড়ার মুখে পড়তে হয় জনসনকে।
এর পর ১৮৬৯ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী জেনারেল ইউলিসিস এস গ্র্যান্টের কাছে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়ে দিতে হয় ডেমোক্র্যাটদের।
একনজরে অ্যান্ড্রু জনসন
দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একজন এই অ্যান্ড্রু জনসন। কোনোদিন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। দর্জির দোকানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন। একবারে মাঠ পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে রাজনীতির ধাপ পেরিয়েছেন জনসন।
অভিশংসিত হওয়া ছাড়াও ক্ষমতায় থাকাকালে আরেকটি ঘটনার কারণে জনসনের নাম নেওয়া হয়। তা হলো, ১৮৬৭ সালে ৭২ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে আলাস্কা ক্রয় করেন জনসন। কীভাবে এটা সম্ভব হলো, জানতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে।
১৮৫৩ সালের অক্টোবরে তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত দারদানেলিস প্রণালি দিয়ে যুদ্ধজাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কের খ্রিস্টানদের রক্ষার অজুহাতে তুরস্কের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় রাশিয়া আক্রমণ চালালে ক্রিমিয়া যুদ্ধের সূচনা হয়।
ক্রিমিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার বছর তিনেক পর ১৮৫৯ সালে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রির প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তখন সিদ্ধান্ত জানানোর মতো অবস্থায় ছিল না, কেননা গৃহযুদ্ধে তারা নিজেরাই তখন ধুঁকছিল।
অবশেষে গৃহযুদ্ধ অবসানের দুই বছর পর ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম সেওয়ার্ড রাশিয়ার প্রস্তাব লুফে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারের সুবিশাল আলাস্কা কিনে নিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র।
এর পর ১৮৬৭ সালের ৯ এপ্রিল সিনেট সে চুক্তিকে বৈধতা দিলে ২৮ মে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন সে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এভাবেই সে বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-পরিসীমার অংশ হয়ে যায় আলাস্কা।
রিচার্ড নিক্সন কী করেছিলেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নিক্সনই প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
কীভাবে ঘটেছিল সেই ঘটনা? ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাস। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ও রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে গভীর বিভক্তি। সংকট চলছে মার্কিন অর্থনীতিতেও। কংগ্রেসের একটি বড় অংশ তখন চলে গেছে রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে। মার্কিন জনমতও নিক্সনের বিপক্ষে। সবাই জানতে চাইছিল, ১৯৭২ সালে ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টির কার্যালয়ে অনুপ্রবেশ এবং টেলিফোনে আড়িপাতার ঘটনার ব্যাপারে নিক্সন কতটুকু জানতেন বা জানতেন না। তখন আড়াই বছর ধরে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে নানা তথ্য ফাঁস হচ্ছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ব্যাপারটা একেবারে চরমে উঠে গেল।
নিক্সনকে অভিশংসন করতে প্রতিনিধি পরিষদের জুডিশিয়ারি কমিটি ১৯৭৪ সালের ২৭ জুলাই তিনটি অভিযোগ পাসের অনুমোদন দেয়। অভিযোগগুলো হলো—বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের অবমাননা। প্রতিনিধি পরিষদে নিক্সনকে অভিশংসনে ভোটাভুটির জন্য অভিযোগগুলো পাঠানো হয়।
এর পর ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট হোয়াইট হাউস তিনটি টেপ রেকর্ডকৃত কথোপকথনের হুবহু বিবরণী প্রকাশ করে। এসব কথোপকথন নিক্সন গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতভাবে রায় দেয় যে এগুলো প্রকাশ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট নিক্সন দাবি করে আসছিলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি কার্যালয়ে আড়িপাতার ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু ওই কথোপকথনের বিবরণীতে প্রমাণিত হয়ে যায়, এসব ঘটনায় প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কোনো ভূমিকাই ছিল না বলে তিনি যে দাবি করে আসছিলেন—তা ডাহা মিথ্যা। পরিস্থিতি তখন এমন হয় যে নিক্সন যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে মার্কিন কংগ্রেসে তাঁকে অভিশংসন করা হবে।
১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে নিক্সনের প্রেস সচিব জানান, সেদিনই রাত ৮টায় প্রেসিডেন্ট নিক্সন ওভাল কার্যালয় থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
তখনই এটা প্রায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে ওই ভাষণে নিক্সন মূলত পদত্যাগের কথাই ঘোষণা করবেন। হলোও তাই। রিচার্ড নিক্সন ভাষণে বলেন, ‘আমি কখনো দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার লোক নই, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকেই সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। তাই আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি, যা আগামীকাল দুপুর থেকে কার্যকর হবে।’
নিউজউইক সাময়িকীর তৎকালীন হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা টম ডে ফ্রাঙ্ক ওই ভাষণ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, ‘(নিক্সনের) এই ঘোষণার পরই হোয়াইট হাউসের সামনে সমবেত জনতার মধ্য থেকে একটা বিপুল হর্ষধ্বনি শোনা গেল।’
১৯৭৪ সালের ৮ আগস্ট রিচার্ড নিক্সন আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান।
এর পর কী হয়?
নিক্সন পদত্যাগ করার ছয় সপ্তাহ পর পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিক্সনের যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা করেন ফোর্ড।
দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট জিমি কার্টারের কাছে হেরে যান ফোর্ড।
একনজরে রিচার্ড নিক্সন
নির্বাচনে হারতে হয়নি তাঁকে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে হোয়াইট হাউস থেকে অপসারিত হন। কখনোই নিজের অপরাধ স্বীকার করেননি নিক্সন। তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কী হতে পারে, তার এক সতর্কবার্তা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নিক্সনের নাম লেখা থাকবে।
লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা হারানোর ২০ বছর পর ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে মৃত্যুবরণ করেন নিক্সন। তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেখানে নিক্সনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কাজ নিয়ে কথা বলেন ক্লিনটন।
তিনি বলেন, ‘নিক্সনের সামগ্রিক জীবন ও কর্মজীবনের চেয়ে ক্ষুদ্র এমন যেকোনো কিছু নিয়ে কথা বলা বন্ধ হবে, চলুন এই কামনাই করি।’
বিল ক্লিনটন কী করেছিলেন?
নিক্সনের ব্যর্থতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার পক্ষে কথা বলা ডেমোক্র্যাট দলীয় ক্লিনটন নিজেই কয়েক বছর পর রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েন।
ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই মার্কিন বিচার বিভাগের বিশেষ তদন্তের মুখোমুখি হতে হয় ক্লিনটনকে।
১৯৯৮ সালে অভিযোগ ওঠে ক্লিনটনের সঙ্গে সাবেক হোয়াইট হাউস শিক্ষানবিশ মনিকা লিউনস্কির সম্পর্কের বিষয়টি। পরে এই অভিযোগ যায় বিচার বিভাগের বিশেষ পরামর্শদাতা কেনেথ স্টারের অধীনে।
এদিকে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলার অংশ হিসেবে— পলা জোন্সের যৌন হয়রানির বিষয়টিও উঠে আসে। পলা জোন্স আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করেন। এদিকে, কেনেথ স্টারের চলমান প্রতিবেদনকে আরো ত্বরান্বিত করে পল জোন্সের অভিযোগ। তবে পল জোন্সের অভিযোগ অস্বীকার করেন বিল ক্লিনটন।
এরই মধ্যে ক্লিনটনকে লিউনস্কির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এরপরই ১৭ জানুয়ারি এক শপথে লিউনস্কির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেন ক্লিনটন।
এর পর হোয়াইট হাউসে গণমাধ্যমের উদ্দেশে ক্লিনটন বলেন, ‘আমি চাই, আপনারা আমার কথা শুনুন। মনিকা লিউনস্কি নামের ওই নারীর সঙ্গে আমার কোনো যৌন সম্পর্ক ছিল না। আমি কখনোই কোনো মানুষকে মিথ্যা বলতে বলিনি। কোনো সময়ই নয়।’
ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর কেনেথ স্টার কংগ্রেসের কাছে তাঁর প্রতিবেদন জমা দেন। ৪৪৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে লিউনস্কির মূল্যবান সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে ক্লিনটনকে কেন অভিশংসন করা উচিত, এ ব্যাপারে ১১টি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর পর প্রতিনিধি পরিষদে ক্লিনটনের বিপক্ষে শপথভঙ্গ ও কংগ্রেসে বাধা প্রদানের অভিযোগে অভিশংসনের জন্য ভোট গ্রহণ হয়।
তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান ক্লিনটন।
ক্লিনটনের পরিণতি
এদিকে, লিউনস্কির সঙ্গে ক্লিনটনের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে আসার পরই তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়।
১৯৯৮ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৬৭ শতাংশ মার্কিন জনগণ ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকার পক্ষে।
এদিকে, অভিশংসন সংকটের মধ্যে চাকরি হারানো রাজনীতিবিদদের মধ্যে শুধু রিপাবলিকানরাই ছিলেন।
ক্লিনটনের কেলেঙ্কারিকে পুঁজি করে ১৯৯৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের পরিকল্পনা করেছিল রিপাবলিকানরা। কিন্তু তা আর হয়নি। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট, কংগ্রেসের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় ডেমোক্র্যাটরা।
ক্লিনটন ২০০১ সালে নিজের পক্ষে ৬৫ শতাংশ জনমত নিয়ে অফিস ত্যাগ করেন। ক্লিনটনের আগে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এত জনপ্রিয় ছিলেন না।
কিন্তু জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে আলবার্ট গোর পরাজিত হলে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হয় ক্লিনটনের দলকে।
একনজরে বিল ক্লিনটন
বিল ক্লিনটনের অভিশংসনের বিষয়টি সামনে এলেই অধিকাংশ মানুষের মাথায় মনিকা লিউনস্কির বিষয়টিই সবার আগে আসে।
তবে মনিকা কেলেঙ্কারিতে ক্লিনটন খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হননি, যতটা হয়েছিলেন আগের দুই প্রেসিডেন্ট। এর কারণ ছিল ক্লিনটনের তুমুল জনপ্রিয়তা।