ইউক্রেনের চার অঞ্চল একীভূত করার ভাষণে যা বললেন পুতিন

Looks like you've blocked notifications!
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

ইউক্রেনের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিবাদ ও বিরোধীতার মুখে শুক্রবার পুতিন এবং ওই অঞ্চলগুলোর নেতারা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। খবর আল জাজিরার। 

লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসোন ও জাপোরিঝিয়া এই চারটি অঞ্চলকে নিজেদের করে নিতে জাতির উদ্দেশে পুতিন ৩৭ মিনিটের এক লম্বা ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন, পশ্চিমাদের ঔপনিবেশিক নীতি, পারমাণবিক অস্ত্র এবং পশ্চিমাদের আদর্শের বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। রুশ ভাষার ওই ভাষণটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ উক্তি তুলে ধরা হলো-

দেশ রক্ষা

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় পুতিন বলেন, ‘আমরা আমাদের সব শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে দেশ রক্ষা করবো। ১৯৯১ সালে সাধারণ মানুষের মতামত না নিয়ে সে সময়ের পার্টির পদস্থ লোকজন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দেয়। জনগণ হঠাৎ করেই দেখতে পায় যে তারা মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, যা সত্যিকার অর্থে ছিল একটি জাতীয় দুর্যোগ….আমার মনে হয়েছে যে তারা বুঝতে পারেননি সত্যিকার অর্থে কী করছিলেন আর এর পরিণতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে। তবে এখন এসব আর গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমরা অতীতে ফিরে যেতে পারবো না… আর রাশিয়া তা প্রয়োজনও মনে করে না।’

কিয়েভের প্রতি বার্তা

‘আমি চাই কিয়েভ কর্তৃপক্ষ ও তাদের পশ্চিমা প্রভুরা আমার কথা শুনবে ও মনে রাখবে। লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসোন ও জাপোরিঝিয়ার জনগণ আমাদের নিজেদের দেশের নাগরিক হতে যাচ্ছে, চিরকালের জন্য। আমরা কিয়েভ শাসকদের শত্রুতা ত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি, আহ্বান জানাচ্ছি যুদ্ধ শেষ করে ২০১৪ সালের মতো আলোচনার টেবিলে বসার জন্য।’

‘আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত কিন্তু ওই চারটি অঞ্চলের মানুষের পছন্দের বিষয়ে কোনো আলোচনায় যাব না। যা করা হয়ে গেছে সে বিষয়ে রাশিয়া বেঈমানি করবে না।’

নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের লিক

‘অ্যাংলো-স্যাক্সনরা শুধুমাত্র অবরোধ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা নাশকতার পথও বেছে নিয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টকর হলেও এটা সত্যি যে নর্ড স্ট্রিম পাইপ লাইনে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে নেওয়া এই গ্যাস পাইপলাইনের ক্ষতি করে কার লাভ এটা সবাই বুঝতে পারছে।’

পশ্চিমা আধিপত্যবাদ

‘পশ্চিমা দেশগুলো মধ্য যুগীয় ঔপনিবেশিক নীতিতে ফিরে গেছে। দাস বাণিজ্য, ভারতসহ আফ্রিকা মহাদেশে শোষণের ধারায় তারা ইংল্যান্ড-ফ্রান্সকে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো অবস্থার মুখোমুখি করে দিয়েছে। সম্পদ ও জায়গা দখলের জন্য তারা জন্তু-জানোয়ারের মতো মানুষ মারছে। এটা মানবতা, সত্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়পরায়ণতার বিরুদ্ধে অবস্থান।’

পারমাণবিক নজির

‘‘যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যে দুই দুইবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ধ্বংসযজ্ঞের নজির তারা স্থাপন করেছিল। আর এখন তারা সত্যিকার অর্থে জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও আরও কয়েকটি দেশ দখল করে রেখেছে ‘মিত্র’ দেশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে।’’

পশ্চিমা আদর্শ

‘এখন পশ্চিমারা আদর্শ, ধর্ম সব কিছুকে অস্বীকার করে সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সময়ে পশ্চিমাদের একনায়কতন্ত্র সব সমাজে এমনকি অনেক পশ্চিমা দেশেও বিদ্যমান। এটা সবার জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। এটা সম্পূর্ণভাবে মানবতা, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের বিরুদ্ধাচারণ।’

‘আমরা কি রাশিয়ার জন্যও এমনটা চাই? আমাদের বাবা-মার বদলে বিভিন্ন সংখ্যার অভিভাবক? সবকিছু কি অর্থহীন হয়ে গেছে? …আমাদের রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা ভবিষ্যত, আমাদের নিজেদের ভবিষ্যত।’