ইউক্রেন ইস্যুতে মধ্যপন্থায় চীন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে চীন। একদিকে, ইউক্রেনের বিষয়ে চীনকে কোণঠাসা করে রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে, মান্দারিনভাষী ইউক্রেনীয়রা তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে চীনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সংবাদমাধ্যম দি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ার পরেও ইউক্রেন ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থানের জন্য বিভিন্ন দেশের সমর্থন পেয়েছে চীন। সৌদি আরব, আলজেরিয়া, মিসর, পাকিস্তান ও জাম্বিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকেরা চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে আলোচনার পর ইউক্রেনের বিষয়ে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গত ২৪ মার্চ ইউক্রেন ইস্যুতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিয়ত ইউক্রেনে চীনের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিকল্পনার কথা চীন আগে থেকে জানত না উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্র যে জৈবিক সামরিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে, সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট বক্তব্য ওয়াশিংটনের দেওয়া উচিত। তিনি দাবি করেছেন, চীন রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে—এমন তথ্য মিথ্যা।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, তাইওয়ান আর ইউক্রেনকে এক ভাবাটা ভুল হবে। কারণ, চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাইওয়ানকে ব্যবহার করা হবে ব্যর্থতার শামিল।
এদিকে, বেইজিং মস্কোকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে—এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সনদকে ‘বটম লাইন’ বলে উল্লেখ করেছেন ওয়াশিংটনে অবস্থানরত চীনের রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাং।
কিন আরও বলেন, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে বেইজিং ‘আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়ম’ অনুসরণ করেছে।
চীন আরও বলেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বেইজিংয়ের জন্য ততটাই হুমকিস্বরূপ, যতটা তারা মস্কোর জন্য।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন দাবি করেছেন, ২০টি ফ্লাইটে করে ইউক্রেন থেকে চীনের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং ইউক্রেনে আর কোনো চীনা নাগরিক নেই। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নেওয়া পাঁচ হাজার ২০০ চীনা নাগরিকদের মধ্যে চার হাজার ৬০০ জনকে সরকারি চার্টার্ড ফ্লাইটে চীনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অন্যরা তাঁদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে ফিরেছেন।
এর আগে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, এশিয়ার বৃহত্তম তেল শোধনাগার এবং চীনের রাষ্ট্র-চালিত সিনোপেক গ্রুপ রাশিয়ায় সঙ্গে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পেট্রোকেমিক্যাল বিনিয়োগ এবং একটি গ্যাস বিপণন উদ্যোগে আলোচনা স্থগিত করেছিল। পরে কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি রাশিয়া থেকে গ্যাস এবং অপরিশোধিত তেল ক্রয় চালিয়ে যাবে।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপকে কিছুটা প্রশমিত করতে, চীনের অপারেটরেরা রাশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সংযোগকারী ট্রান্স-কন্টিনেন্টাল মালবাহী ট্রেন ব্যবহারকারীদের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেস ব্যবহার করে সাংহাই থেকে রাশিয়ায় চলাচল করা মালবাহী ট্রেনের যাতায়াত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চায়না-ইউরোপ এক্সপ্রেস বিআরআই-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই লাইনটি চীনের প্রায় ৭০টি শহরকে ইউরোপের ২৩টি দেশের প্রায় ১৮০টি শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে ইউএস ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) রাশিয়ার এও ক্যাসপারস্কি ল্যাব, চায়না টেলিকম (আমেরিকাস) করপোরেশন এবং চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ-কে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।