ইউরোপের সুপারমার্কেটে কেন থাকছে না ব্রাজিলের গরুর মাংস
ব্রাজিলে বন উজাড় করে স্থাপন করা গরুর খামার থেকে আসা মাংসজাত পণ্য কিছুদিনের মধ্যে ইউরোপের সুপারমার্কেটে আর পাওয়া যাবে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের একাধিক সুপারমার্কেট চেইন এসব পণ্য অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একটি মার্কিন সংগঠনের বরাতে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
এসব সুপারমার্কেট চেইনের মধ্যে রয়েছে কারফুর বেলজিয়াম, ডেলহাইৎসে ও আউখানের মতো বড় প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের আলবার্ট হেইন, জার্মানির লিডল, এবং যুক্তরাজ্যের সেইন্সবারি’স ও প্রিন্সেসও এ তালিকায় রয়েছে।
যে পণ্যগুলো সুপারমার্কেট প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে—কর্নড বিফ, বিফ জার্কি এবং ফ্রেশ প্রাইম কাট। এসব পণ্য ব্রাজিলের অ্যামাজন ও প্যান্টানাল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলাভূমিতে পালন করা গবাদি পশু থেকে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ মাইটি আর্থ এবং ব্রাজিলের বেসরকারি সংস্থা রিপোর্টার ব্রাজিল যৌথভাবে বন উজাড় করার সঙ্গে ব্রাজিলের মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান জেবিএস, মারফ্রিগ এবং মিনার্ভার সাও পাওলো উৎপাদন কারখানার সম্পর্ক থাকা বিষয়ে তথ্য উদ্ঘাটন করে। এর পরেই ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা এলো।
গবাদি পশু ‘পাচার’
রিপোর্টার ব্রাজিল-এর অভিযোগ, জেবিএস বেআইনিভাবে বন উজাড় করে স্থাপন করা খামার থেকে গরুর মাংস সরবরাহ করে। এ প্রক্রিয়াকে ‘গবাদি পশু পাচার’ বলছে রিপোর্টার ব্রাজিল। এ প্রক্রিয়ায় গবাদি পশুকে অবৈধ স্থানে স্থাপিত খামারে লালন-পালন করা হয় এবং তারপর সেগুলোকে কসাইখানায় পাঠানোর আগে বৈধ খামারে বিক্রি করা হয়। এর ফলে পশুটি কোন জায়াগা থেকে আসছে, সে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে লিডল নেদারল্যান্ডস। তারা ঘোষণা দিয়েছে—২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা কোনো গরুর মাংসই তারা আর বিক্রি করবে না। একই ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় জার্মান সুপারমার্কেট রেভে, এডেকা ও নেটটোর সমালোচনাও করেছে মাইটি আর্থ।
কারফুর-এর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বিষয়ক পরিচালক আগাথে গ্রোসস্মিথ বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও মাংসের উৎস খুঁজে দেখা হবে, যাতে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুবিধা হয়।’
সেইন্সবারি’স বেশির ভাগ মাংস যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড থেকে সরবরাহ করে। তবে প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান ব্রাজিলের বাইরে থেকে কর্নড বিফ আনার বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করছে। একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন আলবার্ট হেইন-এর মুখপাত্রও।
অ্যামাজনে বাড়ছে বন উজাড়
মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান জেবিএস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, অবৈধ বন উজাড়ে প্রতিষ্ঠানটি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। এ নীতি মেনে না চলায় প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ১৪ হাজার সরবরাহকারীকে নিষিদ্ধ করেছে। পরোক্ষ সরবরাহকারীদের পর্যবেক্ষণে রাখাটা পুরো সেক্টরের জন্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু, ২০২৫ সালের মধ্যে এ ব্যবস্থাও চালু করার কথা জানিয়েছে জেবিএস।
কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর শাসনামলে ব্রাজিলের অ্যামাজনে বন নিধনের হার বেড়ে চলেছে। তাঁর দাবি—এর ফলে দেশের জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন হবে। দেশটির জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বন ধ্বংসের হার ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। উজাড় করা বনের বড় একটি অংশ ব্যবহার হচ্ছে পশু পালনে। মাইটি আর্থ-এর পরিচালক নিকো মুজি এক বিবৃতিতে ইউরোপের সুপারমার্কেট চেইনগুলোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যারা বন উজাড়ে জড়িত, তাদের গলায় ‘ফাঁস এঁটে বসেছে’।