করোনার টিকার মেধাস্বত্ব প্রত্যাহারের প্রস্তাবে জার্মানির ‘না’

Looks like you've blocked notifications!
করোনার টিকার ওপর থেকে মেধাস্বত্বের অধিকার প্রত্যাহারের প্রস্তাবে না করে দিয়েছে জার্মানি। ছবি : রয়টার্স

সাময়িকভাবে নভেল করোনাভাইরাসের টিকার ওপর থেকে মেধাস্বত্বের অধিকার বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট’ (আইপিআর) প্রত্যাহার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জার্মানি। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা টিকা উৎপাদনে কোনোরকম বাধা দিচ্ছে না, কিন্তু আইপিআর গবেষণা ও আবিষ্কারের উৎস এবং এটির সুরক্ষা দরকার। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে সাময়িকভাবে করোনা টিকার ওপর থেকে আইপিআর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়। ৬০টি দেশ এতে যুক্ত হয়। এ প্রস্তাবে সায় দেওয়ার কথা জানিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। এসব দেশের দাবি, আইপিআর প্রত্যাহার করা হলে অনেক দেশে জীবনরক্ষাকারী টিকার উৎপাদন করা যাবে। ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে দ্রুত টিকা পৌঁছানো যাবে।

তবে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিসহ এই প্রস্তাবের বিরোধীরা বলছে, আইপিআর প্রত্যাহার হলেই কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও মিলতে পারে।

এক বিবৃতিতে জার্মানির সরকার বলেছে, ‘প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সার্বিকভাবে টিকা উৎপাদনে বড় রকমের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঘাটতির জায়গাগুলো হচ্ছে- উৎপাদনের সক্ষমতা ও উচ্চ মান ধরে রাখা। মেধাস্বত্ব এখানে কোনো বিষয় নয়। তা ছাড়া উৎপাদন বাড়াতে অংশীদার কোম্পানিগুলো তো কাজ করছে।’

ওষুধ প্রস্তুতকারক শিল্পে শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষমতাধর অর্থনীতির দেশ জার্মানির। করোনাভাইরাসের বহুল ব্যবহৃত টিকা তৈরি করেছে জার্মানির কোম্পানি বায়োএনটেক।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনসের প্রধান থমাস কুয়েনি বিবিসিকে জানান, টিকার মান ও নিরাপত্তা নিয়ে আপসের যে চিন্তা দেখা যাচ্ছে তাতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘সরবরাহ প্রক্রিয়ায় ঘাটতি বা সমস্যা থাকতে পারে। সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করা দরকার। ধনী দেশগুলো প্রথম দিকে উৎপাদিত ডোজগুলো নিয়ে রাখছে, এটিও উদ্‌বেগজনক।’

অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এর আগে এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল সংস্থাটি। যুক্তরাজ্য এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেসময় এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল।

কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন নতুন করে প্রস্তাবে সায় দেওয়ার ঘোষণা দিলে প্রস্তাবটি নতুন করে আলোচনায় আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছে ডব্লিউটিও। সংস্থাটির প্রধান নাগোজি ওকোঞ্জো-আওয়েলা বিবিসি নিউজআওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সদস্য দেশগুলোর একটি বাস্তবসম্মত চুক্তিতে আসা উচিত। কারণ বর্তমান অসমতা একদমই ‘যুক্তিযুক্ত নয়’।

কাঁচামালের ঘাটতি এবং কারিগরি দক্ষতার অভাব থাকলেও টিকার বৈশ্বিক সরবরাহে গতি আনতে অন্যত্রও কাজ শুরু করা যেতে পারে বলে মত দেন ডব্লিউটিও প্রধান।

এদিকে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান জানিয়েছেন, দেশটিতে ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। সম্প্রতি টিকাটি নেওয়ার পর সম্ভাব্য রক্ত জমাট বাধার সমস্যা দেখা দেওয়ার পর ষাটোর্ধ্বদের জন্য টিকাটির ব্যবহার সাময়িক নিষিদ্ধ করা হয়।