করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধাবাসের ৬৮ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত আরো অনেকে

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বে নানা ঘটনায় ‘মর্মান্তিক’, ‘বেদনাদায়ক’ শব্দগুলো উচ্চারিত হচ্ছে বারবারই। এরই মধ্যে এক ভয়ানক খবর জানাল সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃদ্ধনিবাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো ৭০ জনের। ঘটনাটি ঘটেছে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি বৃদ্ধাবাসে। অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন জানতে ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাসের ছোবলে শ্মশান হয়ে গেল একটি বৃদ্ধাবাস।
‘হলিয়োক সোলজার্স’ নামে ওই বৃদ্ধাবাসে ক্রমেই বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। তদন্তকারী দল খতিয়ে দেখছে, ওই বৃদ্ধাশ্রমের কেউই কি চিকিৎসাসেবা পাননি, তা না হলে সেখানকার পরিস্থিতি এমন হলো কী করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এডওয়ার্ড ল্যাপয়েন্ট নামের একজনের শ্বশুর ওই বৃদ্ধাবাসে থাকেন। তাঁর এখন অল্প সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে। এডওয়ার্ড বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়ানক। তাঁরা কোনো সুযোগই পাননি।’
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধনিবাসের ৬৮ জন এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া আরো একজনের মারা যাওয়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই বৃদ্ধাবাসের আরো ৮২ বাসিন্দা ও ৮১ কর্মী করোনায় আক্রান্ত।
ওই নিবাসের সুপারিনটেনডেন্টকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা কিছু জানতেন না বলে মিথ্যা কথা বলছেন। সুপারিনটেনডেন্ট বেনেট ওয়ালশ বলেন, তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, নিবাসের অবস্থা সংকটজনক। সেখানে কর্মী সংকট ছিল আর সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।
ওই বৃদ্ধাবাসে নার্সের দায়িত্ব পালনরত জোয়ান মিলার বলেন, কর্মীসংখ্যা কম থাকায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে এতটাই কর্মী সংকট ছিল যে এক ইউনিটের কর্মীরা অন্য ইউনিটে যেতে বাধ্য হচ্ছিলেন। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়ানক আকার ধারণ করে। একসময় একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কোনো কর্মী না থাকায়। প্রবীণদের সেখান থেকে সরিয়ে আরো কাছাকাছি করে ভবনের অন্য প্রান্তে রাখা হয়েছিল।
জোয়ান মিলার বলেন, বৃদ্ধ মানুষগুলোকে গাদাগাদি করে থাকতে হতো। ফলে কে করোনা পজিটিভ, কে নয় তা জানা ছিল না। সবাই একসঙ্গে থাকতেন বলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। এর পরেই ঘটনা জনসমক্ষে আসে।
গত মাসেও ওই বৃদ্ধাবাসে ২৩০ জন বাসিন্দা ছিলেন। আর গত সোমবার সেখানে ছিলেন ১০০ জন। তাঁদের বেশির ভাগের শরীরেই করোনাভাইরাসের মৃদু ও মধ্যম মানের সংক্রমণ রয়েছে। কারো জ্বর, কারো কাশি। কেউ কেউ সেরে উঠছিলেন। আবার অতি বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ারও লক্ষণ রয়েছে।
একাধিক বৃদ্ধের অভিযোগ, তাঁরা যখন নিজেদের আত্মীয়দের খবর জানতে চাইতেন কর্তৃপক্ষের কাছে, তখন একেক দিন একেকজন উত্তর দিত। আর ওই নিবাসের প্রকৃত অবস্থাটা কেউই বলত না। ‘হলিয়োক সোলজার্স’ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন বৃদ্ধাবাস।