চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে করোনা গবেষণার তথ্য চুরির অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর সময় থেকেই চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বৈরথ ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে চলছে টানাপোড়েন। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন বিচার বিভাগের একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সে আগুনে যেন আরেকটু ঘি পড়ল। মার্কিন বিচার বিভাগের অভিযোগ, চীনের হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ল্যাবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে, সে ল্যাবগুলোর তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ দুজন চীনা হ্যাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি করছেন। লি জিয়াউ ও ডং জিয়াঝি নামের ওই দুই হ্যাকার চীনের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন বলে দাবি করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
ওদিকে রাশিয়ার দিকে আঙুল তুলেছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। দেশগুলোর দাবি, রাশিয়া তাদের কোভিড-সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য চুরির চেষ্টা করছে।
ইতোমধ্যে মার্কিন আদালতে দুই চীনা হ্যাকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একাধিক সংস্থার লাখ লাখ ডলার মূল্যের বাণিজ্য-সংক্রান্ত তথ্য এবং করোনা গবেষণার অতি মূল্যবান তথ্য চুরির অভিযোগে উঠেছে। মার্কিন আইনি কর্মকর্তাদের মতে, গত কয়েক মাসে চীনা হ্যাকাররা রীতিমতো গবেষণা করে মার্কিন সিস্টেমের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করেছে এবং সে অনুযায়ী তথ্য পাচার হয়েছে।
মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য
মার্কিন আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে মার্কিন ব্যবসা বাণিজ্য-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে করোনার প্রতিষেধক ও চিকিৎসা সম্বন্ধিত গোপন তথ্য চুরির অভিযোগ রয়েছে। সূত্রের খবর, এর আগে মার্কিন ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাসের পর মাস যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা সত্ত্বেও গুরুত্ব দেয়নি প্রশাসন।
কোনো বিদেশি হ্যাকারের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণা-সংক্রান্ত তথ্য চুরির অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে টানাপোড়েন
মার্কিন বিচার বিভাগের উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সহকারী অ্যাটর্নি জন ডেমার্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তথ্য চুরির জন্য ডেকে আনা হচ্ছে হ্যাকারদের। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কষ্টসাধ্য পরিশ্রম এবং করোনার বিষয়ে প্রাপ্ত অতিমূল্যবান তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট দল।’
জন ডেমার্সের এ বক্তব্য স্বভাবতই ঝড় তুলেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে।
হ্যাকিং হয়েছে নাকি শুধু চেষ্টা করা হয়েছে
আন্তর্জাতিক সূত্রের মতে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়নি যে চীনা হ্যাকাররা মার্কিন প্রশাসনের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নথি চুরি করতে সক্ষম হয়েছে, নাকি শুধু উঁকিঝুঁকি দিয়েই ক্ষান্ত থেকেছে। মার্কিন সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী জানান, এ বছরের জানুয়ারি মাসে চীনা হ্যাকাররা ম্যাসাচুসেটসের একটি করোনা গবেষণাকারী সংস্থার তথ্য চুরির চেষ্টা করে। এ ছাড়া মেরিল্যান্ডের একটি ওষুধ ফার্মের করোনা গবেষণা শুরু করার ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের কম্পিউটার সিস্টেমে হানা দেয়। যদিও কিছু আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, নিজেদের সপক্ষে যুক্তি খাড়া করে ক্রমেই চীনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোণঠাসা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি মাসের শুরুতে হয় মামলা দায়ের
চলতি মাসে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মার্কিন প্রশাসন একযোগে তথ্য চুরির অভিযোগ আনে। এ ক্ষেত্রে হ্যাকারদের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজশের কথাও জানানো হয়। এ মাসের শুরুতেই মূলত ওয়াশিংটনের আদালতে এ সমস্যার নিষ্পত্তি করতে মামলা দায়ের হয়। গতকাল মঙ্গলবার ওই মামলার কাজ শুরু হয়।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপির পক্ষ থেকে চীনা দূতাবাসে একটি ই-মেইল করে হ্যাকারদের কার্যক্রম সম্পর্কে মন্তব্য জানাতে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি চীন কর্তৃপক্ষ।