জর্জিয়ায় প্রতিবাদ : বিতর্কিত আইন কি ভবিষ্যতের সংগ্রামের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

Looks like you've blocked notifications!
জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর সতর্ক নজরদারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ছবি : রয়টার্স

বিতর্কিত ‘বিদেশি এজেন্ট’ আইনের কারণে জর্জিয়ার পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘর্ষ হয়েছে যাকে দেশটির সরকার এবং জর্জিয়ার নাগরিকদের মধ্যে একটি বড় বিভাজনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ও বুধবার (৮ মার্চ) রাতে হাজার হাজার জর্জিয়ান রাজধানী তিবলিসির রাস্তায় নেমে প্রস্তাবিত ওই আইনটির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানায়। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সীমিত করবে এবং বেসরকারি সংস্থাসহ বিরোধী মতকে দমন করতে ব্যবহার হবে। খবর বিবিসির।

দাঙ্গা পুলিশ রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান এবং মরিচের স্প্রে ব্যবহার করেছে। প্রস্তাবিত বিলটি মস্কোর আইনের আদলে তৈরি এবং বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ সেটিকে ‘রাশিয়ান আইন’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানায়।  কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে এই ইস্যুটি পশ্চিমাপন্থি এবং রাশিয়াপন্থি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দেশের ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা নিয়ে বৃহত্তর সংগ্রামের ইঙ্গিত মাত্র।

জর্জিয়ার সরকার ইউক্রেনের পক্ষ নিতে অস্বীকার করে। যদিও অনেক জর্জিয়ার নাগরিক ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এমনকি কেউ কেউ রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছেন। যাতে সরকার ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক ফাটল স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। 

বিদেশি এজেন্ট আইন কি?

এই আইন অনুযায়ী কোনো বেসরকারি সংস্থা বা গণমাধ্যম যদি ২০ শতাংশের বেশি অনুদান পায় তবে তাদের বিশেষ শ্রেণিভুক্ত করা হবে এবং একটি বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে। এই ধরনের ঘোষণা জমা দিতে ব্যর্থ হলে নয় হাজার পাঁচশ’ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হবে।

জর্জিয়ার বিচার মন্ত্রণালয় বলছে, এই পদক্ষেপ দেশে বিদেশি এজেন্টদের প্রভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করবে। আইনের সমর্থকরা যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরকম বিদেশি এজেন্ট নিবন্ধন আইন (এফএআরএ) রয়েছে। বিরোধীরা আইনটিকে বাকস্বাধীনতার উপর রাশিয়ার নিজস্ব ক্র্যাকডাউন অনুকরণ করার প্রচেষ্টা এবং মস্কোর প্রভাব বাড়ার লক্ষণ হিসাবে নিন্দা করছে। তারা আইনটিকে জর্জিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের সম্ভাবনার জন্য একটি বড় বাধা হিসাবে মনে করে।

অতীত থেকে আঘাত

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে জর্জিয়া স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী দশকের বেশিরভাগ সময় অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হয়েছে এবং সে সময়ে আবখাজিয়া অঞ্চলটি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। তিবলিসি বলছে, বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটি রাশিয়ার দখলে ছিল এবং তখন থেকেই দখলে রয়েছে।

২০০০ ও ২০১০ এর দশকে জর্জিয়া তার অর্থনীতিকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করেছিল। দুর্নীতি দূর করে ইইউ এবং ন্যাটোর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।

২০০৮ সালে পাঁচ দিনের যুদ্ধের পরে রুশ সৈন্যরা জর্জিয়ার দক্ষিণ ওসেটিয়া নামে আরেকটি অঞ্চল দখল করে। এই অঞ্চলটি পরে তার স্বাধীনতাও ঘোষণা করে যাকে রাশিয়ার পাশাপাশি সিরিয়া এবং ভেনিজুয়েলা সহ কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি দেয়। দক্ষিণ ওসেটিয়া এখনও কার্যত রাশিয়ার দখলে রয়েছে।

বেশিরভাগ জর্জিয়ান সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক। জনমত জরিপ অনুসারে বেশিরভাগ নাগরিকই দক্ষিণ ওসেটিয়া এবং আবখাজিয়া সমস্যার  শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান চায়।

ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন

গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পরে ইউক্রেনকে প্রকাশ্যে সমর্থন করতে বা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সরকারের অস্বীকৃতি অনেক জর্জিয়ানকে ক্ষুব্ধ করেছে যারা এই সংঘাতকে মস্কোর আগ্রাসী যুদ্ধ হিসাবে দেখে।

জর্জিয়া কর্তৃপক্ষ দেশটি থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের ইউক্রেনে যাওয়া বন্ধ করার চেষ্টা করেছে এই বলে যে এটি দেশটিকে সরাসরি সংঘাতের দিকে টেনে আনবে। শেষ পর্যন্ত অনেকে ইউক্রেনে যেতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু সরকার তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধরত জর্জিয়ানদের সঠিক সংখ্যা অজানা। তবে এটি অন্তত শতকের মধ্যে বলে মনে করা হয়।