জার্মানির নির্বাচন : রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী প্রতিশ্রুতি

Looks like you've blocked notifications!
নির্বাচনে জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো নানামুখী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

আজ রোববার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন জার্মানরা। ভোটকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতির পসরা সাজিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক-রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, এরই মধ্যে সে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে দলগুলো। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আয়কর, নাগরিকদের অবসরকালীন ভাতা, অভিবাসন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামাজিক সুরক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী প্রতিশ্রুতি, সে বিষয়টি উঠে এসেছে জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে।  

খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ)

তুলনামূলক রক্ষণশীল দল হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাসীন সিডিউ এবং তার সহযোগী সিএসইউ ভোটারদের নিজেদের ঘরে টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

জলবায়ু ও গণপরিবহ

ক্ষমতাসীন দলটির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি হলো—পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করা। আর, এ ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব একটি বাজারব্যবস্থা তৈরি করতে চায় তারা। তা ছাড়া আকাশপথের যাত্রায় সিনথেটিক জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলছেন দলটির নেতারা। সেইসঙ্গে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কোনো গতিসীমা নির্ধারিত করে দেওয়ার এবং জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধের বিপরীতেই কথা বলছে দলটি।

অভিবাসন

ক্ষমতাসীন এ দলটি ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকট সামাল দিয়েছিল। হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে দলের প্রধান অ্যাঙ্গেলা মেরকেল একদিকে যেমন প্রশংসিত হয়েছিলেন, অন্যদিকে দেশের ভেতরে তাঁর এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন কেউ কেউ। আর তাই, চলতি নির্বাচনকে সামনে রেখে তুলনামূলক রক্ষণশীল এ দলটি ভোটারদের অভিবাসন বিষয়ে কী প্রতিশ্রুতি দেয়, তা আলোচনায় ছিল। তবে বরাবরের মতো, দলটি এবারও আশ্রয় চাওয়াকে মানুষের মৌলিক অধিকার বলে প্রচার করছে। তবে, এ বিষয়ে কিছু কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করতে চায় তারা। এর মধ্যে রয়েছে আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার বিষয়ে কঠোর হওয়া এবং আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন নাকচ হলে তাকে দেশে পাঠানোর বিষয়ে আরো তৎপর হওয়া। তা ছাড়া নিরাপদ দেশের তালিকা আরও বড় করতে চায় দলটি। আর, যে সব শরণার্থী জার্মানিতে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জোরারোপ করছে দলটি।   

সামাজিক সুরক্ষা ও আবাসন

কর ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে জার্মানির বিভিন্ন এলাকায় ১৫ লাখেরও বেশি নতুন ঘর বানানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন দলটির নেতারা। এদিকে, অবসরকালীন ভাতাকে গড় আয়ের সমান রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনেও স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি দলটি। জানা গেছে, মায়েদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে সহযোগী দল সিএসইউর সঙ্গে এখনেও একমত হতে পারেনি মেরকেলের সিডিইউ। 

আয়কর

ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের ওপর ধার্য কর কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। তবে, এমন পদক্ষেপের ফলে শুধু দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণীই লাভবান হবে—এমন সমালোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আয়ের ওপর আরোপিত কর কমিয়ে আনার কথাও বলছে দলটি। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।  

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি

দেশের অভ্যন্তরে উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি প্রদানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজেদের নেতৃত্বের অবস্থানকে সমর্থন করছে সিডিইউ। এ কারণে বিদেশে জার্মান সেনাবাহিনীর মিশনের সংখ্যা বাড়াতে চায় তারা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জলবায়ু ইত্যাদির ওপর জোরদানের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার দলটির।

সোশ্যল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)

ভোটারদের মন জয় করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বামপন্থি দল এসপিডিও। এর মধ্যে রয়েছে:

জলবায়ু ও গণপরিবহ

হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সর্বোচ্চ গতিসীমা ১৩০ কিলোমিটার করতে চায় এসপিডি। আর, সামনের বছরগুলোতে অন্তত ১৫ মিলিয়ন ইলেকট্রিক কার বাজারে আনতে চায় তারা। দলটি বলছে, এর সবই মূলত পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার কৌশল। তা ছাড়া ইউরোপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলের ভাড়া কমাতে চায় দলটি। এর মাধ্যমে ফ্লাইট চলাচল কমিয়ে আনার লক্ষ্য তাদের।

অভিবাসন

ক্ষমতায় গেলে অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না তারা। বরং বেশি মাত্রায় আশ্রয়প্রার্থীদের পরিবারকে জার্মানিতে আসার সুযোগ দিতে চায় এ দলটি।

সামাজিক সুরক্ষা ও আবাসন

অবসরকালীন ভাতাকে মানানসই অবস্থানে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। অবসরে যাওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬৭ই রাখতে চায় দলটির নেতারা। আবাসন সংকট মেটাতে প্রতি বছর এক লাখ সোশ্যাল হাউজিং ইউনিট বানানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দলটির নেতারা। তা ছাড়া ঘর বানানোর জন্য শহর এলাকার জমি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানিকে না দিয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের হাতে দিতে চায় তারা।

আয়কর

বামপন্থি এ দলটি ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১২ ইউরো করার ঘোষণা দিয়েছে। তা ছাড়া দলটি ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’ নামের এক ধরনের করব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে, যা ধনীদের প্রদান করতে হবে। এ করের পরিমাণ হবে শতকরা এক ভাগ। সেইসঙ্গে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর আরেপিত কর কমিয়ে আনার কথাও বলেছে তারা। ঘাটতি মেটাতে যে সব ব্যক্তি বছরে ৯০ হাজার ইউরো আয় করছেন, তাঁদের আয়ের ওপর ৪৫ শতাংশ কর, এবং যাঁরা বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার ইউরো আয় করছেন, তাঁদের আয়ের ওপর ৪৮ শতাংশ কর বসানোর পরিকল্পনা করছে দলটি।

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি

বিদেশ নীতির বেলায় দলটির মূলত জলবায়ু এবং বিশ্ব্যাপী ন্যায্য বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিতে চাইছে। তা ছাড়া দেশের মোট জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক দুই ভাগ অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করার পরিকল্পনা তাদের। ইউরোপের নিরাপত্তায় একটি যৌথবাহিনী গড়ে তোলার কথাও বলছে দলটি। যদিও ন্যাটোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বলবৎ থাকবে। তবে, রাশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যেতে চায় না তারা। আর, চীন বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে দলটি বলছে—জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা খুব জরুরি।

গ্রিন পার্টি

পরিবেশ নিয়ে অন্য দলগুলোর চেয়ে বেশি সচেতন বলে পরিচিত গ্রিন পার্টি বা সবুজ দলের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির তালিকাও বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছে—স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাটসহ নানাখাতের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ।

জলবায়ু ও গণপরিবহ

২০৩০ সাল থেকে রাস্তায় কার্বনডাইঅক্সাউড নির্গমণ করে এমন গাড়ি রাখতে চায় না দলটি। তা ছাড়া প্রতি টন কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমনের দাম ৬০ ইউরোতে উন্নীত করতে চায় তারা। যদিও স্বল্প আয়ের মানুষের বেলায় এর ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে। এদিকে, রেল যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে ফ্লাইট চলাচল কমিয়ে আনার পরিকল্পনা আছে তাদের।

অভিবাসন

গ্রিন পার্টির দাবি, অভিবাসনের জন্য উপযোগী দেশ হলেও অভিবাসনকে সহজ করতে জার্মানিতে প্রয়োজনীয় আইনের ঘাটতি রয়েছে। আর তাই, অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরেও দৃঢ় করতে এবং অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টিকে সহজ করতে চায় দলটি। তা ছাড়া পাঁচ বছর জার্মানিতে আছেন, এমন শরণার্থীরা দেশটিতে থাকার অধিকার পায়, সে বিষয়ে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপর কথা বলছে তারা। সেইসঙ্গে সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি তাদের।

সামাজিক সুরক্ষা ও আবাসন

মাসিক বেতনের অন্তত শতকরা ৪৮ ভাগ অবসর ভাতা হিসেবে দিতে চায় দলটি। তা ছাড়া প্রত্যেকের আয় নিশ্চিতকরণ, শিশুদের মৌলিক নিরাপত্তা এবং ন্যূনতম মজুরিও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সবুজ দলের নেতারা। 

আয়করের সীমা কমিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষদের বাড়তি সুবিধা দিতে চায় দলটি। সে ক্ষেত্রে বেশি উপার্জনকারী ব্যক্তিদের আয়ের ওপর অতিরিক্ত কর বসিয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা বলছে তারা। বছরে এক লাখ ইউরো উপর্জনকারী ব্যক্তির আয়ের ওপর কর ৪২ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ এবং দুই লাখ ৫০ হাজার ইউরো উপর্জনকারী ব্যাক্তির আয়ের ওপর ৪৮ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব তাদের।

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি

জার্মানির পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে ফেলতে চায় দলটি। তবে, ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে দলের নেতারা। মানবাধিকারের প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা তাঁদের।

ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এফডিপি)

এফডিপি তাদের এবারের পরিকল্পনাতেও চিরাচরিত বাজারকেন্দ্রীক ও খোলা চিন্তাধারার লিবারেল নীতিতে এগোচ্ছে। তাদের আলোচ্য নীতিগুলো এবারও থাকছে তাদের উচ্চশিক্ষিত, উচ্চ আয়ের ভোটারদের দিকে ঝুঁকে।

জলবায়ু ও গণপরিবহ

জার্মানির হাইওয়ে বা আওটোবানে কোনো ধরনের গতি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে অবস্থান দলটির। রেল পরিষেবাতেও প্রতিযোগিতা বাড়াতে বেসরকারিকরণ চায় তারা। পাশাপাশি, ট্যাক্সির বাজারের বেসরকারিকরণ এবং ফ্লাইট পরিষেবায় কর বসাতে চায় এই দলটি।

অভিবাসন

যে সব ইইউ-বহির্ভূত রাষ্ট্রের নাগরিকদের উচ্চ দক্ষতা রয়েছে, তাঁদের জন্য ব্লু কার্ডের ব্যবস্থা করতে চায় এফডিপি। শুধু তাই নয়, কানাডায় প্রচলিত পয়েন্ট-ভিত্তিক মডেলের ভিত্তিতে অভিবাসন প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব রয়েছে তাদের।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য সাময়িক সুরক্ষা পরিষেবার করার কথা বলে এই দল, যেখানে আমলাতান্ত্রিকতা থাকবে কম। পাশাপাশি, যুদ্ধশেষে এ সব শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যর্পণের বিষয়টিও তারা রেখেছে প্রস্তাবে।

আয়কর

পূর্ব জার্মানির উন্নয়ন খাতে জার্মানির বাকি অঞ্চলের করদাতারা যে বাড়তি অর্থ দেন, যাকে বলা হয় সলিডারিটি সারচার্জ, তা বন্ধ করতে চায় এফডিপি। পাশাপাশি, স্পার্কলিং ওয়াইনের ওপর কর এবং ধনীদের জন্য করও মওকুফ করতে চায় তারা। এতে করে নিয়োগকর্তা ও কর্মী—দুপক্ষেরই কর কমিয়ে ৪০ শতাংশে আনতে চায় এই দল। বাসাভাড়ার জন্য নির্দিষ্ট মান ঠিক করার বিরোধী এই দল। দলটির প্রধান ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারের মতে, এই কর খারিজ করার মাধ্যমে অন্যান্য দলের সাথে সমঝোতায় সুবিধা হবে তাদের।

সামাজিক সুরক্ষা ও আবাসন

সুইডিশ মডেলের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট ইকুয়িটি পেনশনের ব্যবস্থার কথা প্রস্তাব করছে এফডিপি। যে সব ব্যক্তি রাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা পান, তাঁদের আয়ের সুবিধার্থে আরও সাহায্যকারী নিয়ম আনতে চায় তারা।

এফডিপি দলটি কোনো ধরনের রেন্ট ক্যাপ বা বাসাভাড়ার সর্বোচ্চ অঙ্ক নির্ধারণের বিপক্ষে। দলটি চায়—দেশে বাসাভাড়া দেওয়ার বদলে বাসার মালিকের সংখ্যা বাড়ুক।

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি

জিডিপি’র তিন শতাংশ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করতে চায় এফডিপি। যার আওতায় রয়েছে উন্নয়ন সহায়তা এবং সহায়তাভিত্তিক কূটনীতির বিষয়টিও। চীন ও রাশিয়ার কড়া সমালোচক এই দল বৃহত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে ডেটা ট্রাফিক আরও নিরাপদ করার লক্ষ্যে আলোচনায় আগ্রহী। এর সঙ্গে, যে সব অঞ্চলে সমকামী, উভকামী এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকার খর্ব করা হয়—সে সব দেশকে সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা প্রস্তাব করছে এফডিপি দলটি।

অল্টারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (এএফডি)

বরাবরের মতো অভিবাসনের বিরোধীতা করে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়চেল্যান্ড (এএফডি)। অবশ্য, কোনো দলই এএফডির সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার গঠনে আগ্রহী নয়।

জলবায়ু ও গণপরিবহ

পরিবেশের পরিবর্তনের ওপর মানুষের জীবনাচরণের প্রভাব আছে—এ বিষয়টি বিশ্বাস করে না এএফডি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে জার্মানিকে সরিয়ে আনা, ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোটরযানের ব্যবহার পক্ষে এবং জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিপক্ষেই মূলত চলতি নির্বাচনে এ দলটির অবস্থান ।

অভিবাসন

অভিবাসন প্রক্রিয়া অর্থাৎ বিদেশিদের অভিবাসী হিসেবে জার্মানিতে আসার যে পথ, তা সংকুচিত করতে চায় এএফডি। এ ছাড়া জার্মানিতে অবস্থানরত শরণার্থীদের পরিবারের সদস্যদের জার্মানিতে আসার সুযোগ প্রদান বন্ধ করার পক্ষেও প্রতিশ্রুতি তাদের।

সামাজিক সুরক্ষা ও আবাসন

অভিবাসন, জলবায়ু এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার ফলে যে বাড়তি ব্যয় হয়, তা কমিয়ে অবসরকালীন ভাতাব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করতে চান দলটির নেতারা। তা ছাড়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দিতে চায় তারা। দলটির দাবি, অভিবাসীদের জন্যই জার্মানিতে আবাসন সংকট দেখা দিচ্ছে।

পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি

ন্যাটো এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপসহ এমন সব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি সমর্থন আছে এএফডির। তবে, তাদের এ সমর্থন সাময়িক সময়ের জন্য। কেননা, তারা মনে করে—এ সব সংস্থা জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য হুমকি। তা ছাড়া ন্যাটোর কর্মপরিধি কমিয়ে এনে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে শক্তিশালী করতে চান কট্টরপন্থি এ দলটির নেতারা।