টুইটার কেনায় সাহায্য পেতে ব্যাংকগুলোকে যা বলেছেন মাস্ক

Looks like you've blocked notifications!
ধনকুবের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা এলন মাস্ক। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রায় ৪৪ বিলিয়ন (চার হাজার ৪০০ কোটি) মার্কিন ডলারে মাইক্রোব্লগিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কিনেছেন টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী কর্মকতা এলন মাস্ক। এবার টুইটার থেকে অর্থ উপার্জন করতে চান তিনি। টুইটার কেনায় সাহায্য করতে রাজি হওয়া ব্যাংকগুলোকে তেমন বার্তাই দিয়েছিলেন এ ধনকুবের ব্যবসায়ী। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

আজ শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছেন—তিনি টুইটারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের বেতন কর্তন করে প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাবেন এবং টুইট থেকে আয়ের নতুন উপায় বের করবেন। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন সূত্রের বরাতে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, মাস্ক গত ১৪ এপ্রিল টুইটার কেনার প্রস্তাব দেওয়ার পর ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। এসব প্রতিশ্রুতি দেখেই ২১ এপ্রিল টুইটারের কার্যনির্বাহী বোর্ডের মাস্কের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। তাই, বোঝাই যাচ্ছে—এসব প্রতিশ্রুতি বোর্ডের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এগুলোর ওপরই ভিত্তি করেই বোর্ড মাস্কের ‘সেরা ও চূড়ান্ত’ প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।

ব্যাংকগুলোর অর্থসহায়তা পেতে মাস্ককে বোঝাতে হয়েছে যে, ঋণ পরিশোধের মতো টুইটারের যথেষ্ট আয়ের প্রবাহ রয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত টুইটার কেনার জন্য তিনি ১৩ বিলিয়ন (এক হাজার ৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার ঋণ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। সেইসঙ্গে নিজের প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারের বিপরীতে আরও সাড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন মাস্ক। বাদবাকি অর্থ মাস্ক নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে রাজি হয়েছেন।

একাধিক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে,  টুইটারকে ভবিষ্যতে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেটিই তুলে ধরেছেন মাস্ক। এ ছাড়া টুইটারের মালিকানা পাওয়ার পর মাস্ক কোন খাতে খরচ কমাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এমনকি, ব্যাংকের কাছে দেওয়া মাস্কের পরিকল্পনায় বিস্তারিত বর্ণনাও তেমন একটা আছে।

মাস্ক এরই মধ্যে টুইটারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বেতন কর্তনের বিষয়ে টুইট করেছেন। মাস্কের দাবি—এতে ৩০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ বাঁচবে।

ব্যাংকগুলোকে মাস্ক বলেছেন—টুইটারের মুনাফা ফেসবুক ও পিন্টারেস্টের তুলনায় অনেক কম। মাস্কের যুক্তি—টুইটারের খরচ কমিয়ে একে আরও ভালোভাবে চালানো সম্ভব।

এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—এলন মাস্ক ব্যাংকের কাছে টুইটার কর্মী ছাঁটাইয়ের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।

এক সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ বলছে—চলতি বছরের শেষ নাগাদ টুইটারের মালিকানা বুঝে পাওয়ার আগপর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই নিয়ে মাস্ক কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এ ছাড়া বলা হচ্ছে—টুইটারের আর্থিক অবস্থা ও কর্মীসংখ্যা-সংক্রান্ত গোপন তথ্য না জেনেই প্রতিষ্ঠানটি কেনার সিদ্ধান্ত নেন এলন মাস্ক।

একাধিক সূত্রের দাবি—এলন মাস্ক ব্যাংককে জানান, তিনি টুইটারের রাজস্ব বাড়াতে কিছু ফিচার যোগ করার পরিকল্পনা করছেন। এসব ফিচারের মধ্যে রয়েছে—গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত কিংবা ভাইরাল হওয়া টুইট থেকে অর্থ উপার্জন ইত্যাদি।

এ ছাড়া কোনো ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের টুইটের উদ্ধৃতি দিতে বা এমবেড করতে গেলে টুইটারকে ফি দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও পরিকল্পনায় রেখেছেন বলে ব্যাংককে মাস্ক জানিয়েছেন।

ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী, এলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ২৪৬ বিলিয়ন ডলার। ফোর্বস বলছে, মাস্ক ইঙ্গিত দিয়েছেন—তাঁকে অর্থায়নে সহায়তা করা ব্যাংকগুলোর সিন্ডিকেটেড ঋণের বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিপণনের ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করবেন। এবং সে সময় তিনি টুইটারের ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনার আরও বিস্তৃত তথ্য জানাবেন।

এক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, টুইটারের জন্য নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ঠিক করে রেখেছেন মাস্ক। তবে, তাঁর নাম প্রকাশে রাজি হয়নি সূত্রটি।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টেসলার সিইও মাস্ক ব্যাংকগুলোকে আরও বলেছেন—তিনি টুইটারের জন্য আরও শিথিল নীতিমালা তৈরিতে আগ্রহী। এবং এসব নীতিমালা যথাসম্ভব বিনামূল্যে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় আইনের মধ্যে থেকেই তৈরি করা হবে। এসব কথা অবশ্য মাস্ক আগেও একাধিকবার বলেছেন।

টুইটারের জন্য মাস্কের সংগ্রহ করা ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের প্রাক্কলিত আয়ের সাত গুণ। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এত বিপুল ঋণকে বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে। যে কারণে এসব ব্যাংক সরাসরি ঋণ না দিয়ে টেসলার শেয়ারের বিপরীতে ঋণ দিতে চেয়েছে।

আরেকটি কারণেও কয়েকটি ব্যাংক সরাসরি ঋণ দিতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এসব ব্যাংকের আশঙ্কা—মাস্কের খেয়ালি আচরণের জেরে টুইটার থেকে অনেক প্রতিভাবান কর্মী চলে যেতে পারেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

টুইটারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে উল্লিখিত বিষয় নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।