তালেবানের আফগানিস্তান শাসনের বর্ষপূর্তি আজ

Looks like you've blocked notifications!
আফগানিস্তানের রাস্তায় টহলরত তালেবান সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যেরা। ছবি : সংগৃহীত

তালেবানের আফগানিস্তান পুনর্দখলের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। শুরুতে ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও, ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরেও সেসব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই অধরা। দেশটিতে নাজুক অর্থনীতির কারণে জীবনযাত্রার মান কমেছে। নারীদের ওপর নেমে এসেছে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। এ ছাড়াও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ আছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড এসব তথ্য জানিয়েছে।

পশ্চিমাদের দুই দশকের দখলদারিত্বের পর, গেল বছরের ১৫ আগস্ট কাবুল পুনর্দখল করে তালেবান। একই মাসের ৩০ তারিখ আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতা গ্রহণের পরই ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় তালেবান।

তবে, ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পর পরিস্থিতি পুরোপুরিই ভিন্ন। অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই ভঙ্গ করেছে তালেবান।

আফগানিস্তানে কর্মরত নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর নেইল তুরনার বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এক বছরে কিভাবে দারিদ্র বেড়েছে। অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মানুষের আয় কমেছে। বিপরীতে বাড়ছে বেকারত্ব, শিশু শ্রমের মতো বিষয়গুলো। আসলে ভবিষ্যত খুবই ধূসর। উঁচুনিচু পথে, সিটবেল্ট ছাড়াই আমরা গাড়ি চালাচ্ছি।’

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় এসে শরিয়তি বিধান মেনে নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলেছিল তালেবান। কিন্তু, নানা বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি মেয়েদের হাইস্কুলেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। চলতি বছরের মার্চে মেয়েদের স্কুল খোলা হলেও পরে তা আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নারী অধিকারকর্মী আজিতা নাজহান্দ বলেন, ‘এমন না যে, অতীতেও আমরা খুব ভালো ছিলাম। তবে, নানা সহিংসতার মধ্যেও মেয়েরা তখন স্কুলে যেতে পারত। কিন্তু এখন শিক্ষাগ্রহণের একমাত্র স্বপ্নটাই তাদের বিসর্জন দিতে হচ্ছে।’

২০ বছর ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসা হাজারো সেনাকে ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তালেবান কর্তৃপক্ষ ১৬০টি বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। এ ছাড়াও সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।

সাংস্কৃতিক কাঠামোতে হস্তক্ষেপ না করলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা জানিয়েছিল তালেবান। কিন্তু, এরইমধ্যে আফগানিস্থানে ডয়চে ভেলে, বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে।

যদিও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সফলতা পেয়েছে তালেবান। মাদক নিয়ন্ত্রণে গেল এপ্রিলে আফিম চাষ ও ফসল কাটা নিষিদ্ধ করে তারা। আত্মঘাতী হামলা কিংবা সন্ত্রাসী হামলা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও, তা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে যাচ্ছে তালেবান। অন্যদিকে, নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গোপনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আফগান নারীরা।