দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায় গড়িমসি, মরিশাসে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
মরিশাসের কাছে সমুদ্রে জাপানি একটি তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ায় বহু ডলফিন ও তিমি মাছের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানী পোর্ট লুইসে বিক্ষোভে অংশ নেয় অনেকে। ছবি : সংগৃহীত

একের পর এক ডলফিন মারা যাচ্ছে। গত জুলাইয়ের শেষে মরিশাসের কাছে প্রবাল দ্বীপে আচমকা ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় জাপানের একটি তেলবাহী জাহাজ। সে জাহাজ থেকে তেল বেরিয়ে সমুদ্রের পানি কালো হয়ে গেছে। যার ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র। এরই মধ্যে সমুদ্রের পানি বিষাক্ত হয়ে মারা পড়েছে অন্তত ৩৯টি ডলফিন এবং তিনটি তিমি।

জাহাজ দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায় সরকারের গড়িমসির প্রতিবাদে মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হওয়া সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভে সরকারের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। বিক্ষোভকারীরা টিশার্টে লেখেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালবাসি, কিন্তু আমার সরকারের কারণে আমি লজ্জিত।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৪ মাইল পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে। তেলভর্তি জাহাজ এমভি ওয়াকাশি থেকে প্রায় এক হাজার টন তেল মিশে গেছে সমুদ্রে। গত ২৫ জুলাই জাহাজটি প্রবালে আটকে দুই টুকরো হয়ে যায়। এতে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে ১২ দিন সময় লেগে যায়।

মরিশাসের কাছে বিপন্নপ্রায় জলজ প্রাণিদের অভয়ারণ্যের নিকটে জাপানি একটি তেল ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। ছবি : সংগৃহীত

মরিশাসে গতকাল শনিবার হাজার হাজার জনতা হর্ন বাজিয়ে এবং ড্রাম পিটিয়ে উপকূলীয় এলাকায় ট্যাঙ্কার থেকে তেল নিঃসরণে উদ্ধার তৎপরতা এবং সাগর থেকে ভেসে আসা মৃত ডলফিন উদ্ধারে বিলম্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। প্রতিবাদকারীরা ‘ইউ হ্যাভ নো শেইম’ বা ‘তোমাদের কোনো লজ্জা নেই’ প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ মুহূর্তে তেল না সরালে, সমুদ্রের অনেক জীব বিপন্ন হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে সামুদ্রিক প্রাণির মৃত্যু মিছিল লেগে থাকবে। গত শুক্রবার এতগুলো ডলফিনের মৃত্যুই তার প্রমাণ। সামনের দিনগুলো আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

জাহাজ থেকে তেল বেরিয়ে সমুদ্রের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় বেশ কয়েকদিন ধরেই মরিশাসের সমুদ্রে উপকূলে অসংখ্য কচ্ছপ, মাছ, কাঁকড়ার প্রাণহীন দেহ ভাসতে দেখা যায়। চলতি সপ্তাহে মরিশাসের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার স্থানীয়রা দেখতে পান, সৈকতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য ডলফিন। এগুলোর মধ্যে কিছু মারা গেছে, কোনোটি মৃত্যু পথযাত্রী। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা ছিল, তেলের কারণে সমুদ্রের বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে গিয়ে ডলফিনের মৃত্যুসংখ্যা বাড়তে পারে। আর সে আশঙ্কাই সত্য হয় শুক্রবার। একসঙ্গে ৩৯টি ডলফিনের মৃতদেহ সৈকত থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনটি মৃত তিমিও উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সে একটি মর্মান্তিক ভিডিও প্রকাশ হয়। যেখানে দেখা গেছে, একটি মা ডলফিন তার বাচ্চাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মরিশাসের ওই এলাকায় প্রচুর ডলফিন একসঙ্গে থাকতে দেখা যায়। সেখানে প্রায় দুইশোর বেশি ডলফিনের উপস্থিতি রয়েছে। স্থানীয় এক মৎস্যজীবী জানান, নৌকায় করে সমুদ্রের যাওয়ার সময় একটি মা ডলফিন তার বাচ্চাকে ডলফিনের দলের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিষাক্ত পানির কারণে বাচ্চা ডলফিনটি কিছুতেই সাঁতার কাটতে পারছে না। মা ডলফিন দলে যোগ না দিয়ে নিরন্তরভাবে সন্তানের পাশে থেকে গেছে। অনেক লড়াই করেও সন্তানকে বাঁচাতে পারেনি সে। পরে অন্য এক মৎস্যজীবী দল জানিয়েছে, ওই মা ডলফিনটিও কয়েক ঘণ্টা পর বিষাক্ত তেলে শ্বাস নিতে না পেরে মারা গেছে।

ওই মৎস্যজীবী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমারও বাড়িতে একটি ছটফটে মেয়ে রয়েছে। মা ডলফিনটি যেভাবে সন্তানকে আগলে ধরে নিজের জীবন দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল, সেই দৃশ্য দেখে আমি কেঁদে ফেলছিলাম। এমন মর্মান্তিক ঘটনার সময় খালি আমার মেয়ের কথা মনে পড়ছিল। আমরা দুজনকেই বাঁচাতে পারলাম না।’

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মৃত ডলফিনগুলোর মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্ণ রয়েছে। হাঙরের আক্রমণে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিটি ডলফিনের শরীরের ওপর পুরু তেলের আস্তরণ ছিল। শ্বাস-প্রশ্বাসের ছিদ্রেও ছিল তেলের আস্তরণ। তবে পাকস্থলিতে মেলেনি তেলের নমুনা।

দ্বীপদেশ মরিশাস পর্যটন শিল্পের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। করোনাকালের আগে মহাসাগরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে সারা বিশ্বের পর্যটকরা এখানে এসে ভিড় জমাতেন।