নিউজিল্যান্ডে আবাসিক ভিসার সিদ্ধান্তে হতাশ অভিবাসী শিক্ষার্থীরা

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

আবাসিক ভিসা দেওয়ার জন্য এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষের একটি তালিকা করেছে নিউজিল্যান্ড সরকার, যারা আগামী বছরের শেষ নাগাদ স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাস শুরু করবেন। তবে সেই তালিকায় জায়গা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন অভিবাসী শিক্ষার্থীরা।

নিউজিল্যান্ডে পিএইচডি শেষ করা এবং উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা তাদের পড়াশোনার জন্য এখন শাস্তি বোধ করছেন। অথচ স্বল্প দক্ষ চাকরি করেও অনেকে একক স্থায়ী বসবাসের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাদের মধ্যে যারা এখনো অন্য দেশ থেকে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের কোম্পানিগুলোতে কাজ করছেন তারা ব্যথিত বোধ করছেন, বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও যারা অভিবাসন ঘোষণার বড় অংশ থেকে বাদ পড়েছেন।

এমন একজন বিজয় বানস, যিনি এক দশক ধরে নিউজিল্যান্ডে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে তিনিও আছেন যারা আবাসিক ভিসার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।

নিউজিল্যান্ড সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে যেকেউ স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাসের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যদিও বিজয় বানসের কাজের ভিসার মেয়াদ সপ্তাহান্তে শেষ হয়ে গেছে। খবর রেডিও নিউজিল্যান্ড ন্যাশনালের।

তবে বিজয় বানসের স্ত্রী সবেমাত্র একটি স্বাস্থ্যসেবা কোর্স শেষ করছেন এবং বয়স্ক পরিচর্যা কেন্দ্রে কাজ করছেন-কিন্তু তার এই স্টুডেন্ট ভিসা তাদের দুজনের বসবাসের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

স্ত্রী নিধি অরোরা এবং সন্তান নেভিন ও রায়নাভ বানসের সঙ্গে বিজয় বানস। ছবি : সংগৃহীত

হ্যামিল্টনে অবস্থানকারী দুই সন্তানের বাবা বিজয় বানস বলেছিলেন, দীর্ঘ ১১ বছর দেশটিতে থাকার পর তিনি হতবাক। ‘আমাদের কোনো চিকিৎসার ইতিহাস নেই, পুলিশের কোনো ইতিহাস নেই, সবকিছু ঠিক আছে, আমরা একটি সাধারণ পরিবার,’ তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অন্যায়, আমরা হতবাক, এবং আমার মতো মানুষ, যারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দেশে কাজ করছে এবং তারা কিছুই পাচ্ছে না।’

গত বছর বিজয় ট্রাইব্যুনালে আপিল জিতেছিলেন, কারণ ইমিগ্রেশন নিউজিল্যান্ড (আইএনজেড) তার দক্ষ অভিবাসী আবাসিক আবেদনের ভুল মূল্যায়ন করেছিল। কিন্তু যখন আপিল ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্তটি বাতিল করে ইমিগ্রেশন নিউজিল্যান্ডে ফেরত পাঠায়, তখন সেটিকে অনাবশ্যক করা হয়েছে।

এমনই আরেকজন লিশুয়াং কিউ। তিনি চার বছর ধরে সাউথ দ্বীপে অতিথিসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার জন্য গত নভেম্বরে কলেজে ফিরে যান এবং সেখানে পড়ার সব খরচ বহন করেছেন। তবে তিনি এখন প্রতারিত বোধ করছেন।

‘মহামারি চলাকালীন আমি এখানে টিউশন ফি’র সব খরচ বহন করেছি এবং এখন আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে,’ লিশুয়াং বলছিলেন, ‘যদি আমি কেবল আমার কাজ চালিয়ে যেতাম, রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতাম অথবা আমি রেস্তোরাঁয় ডিশ ওয়াশার হতে পারতাম, আমাকে আবাসন দেওয়া হতো।’

‘ঘোষণাটি দেখে আমার খুব খারাপ লাগেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ন্যায়বিচার চাইছেন। আমি আরও পড়াশোনা বেছে নিয়েছিলাম যেন আমি শিক্ষক হতে পারি। এটা এখন আমার কোনো উপকারের আসেনি, এটা অন্যায়।’

জুলিয়ানা রিউ জুনকাইরা ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় তার পিএইচডি শেষ করছেন। তার স্বামী গত মার্চে একজন স্থাপত্য প্রযুক্তিবিদ হিসেবে দক্ষ অভিবাসী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

একজন ‘স্টুডেন্ট ভিসার অংশীদার’ হিসেবে তিনি (জুলিয়ানার স্বামী) তালিকা করা এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষের মধ্যে জায়গা পাননি, যারা আগামী বছরের শেষ নাগাদ স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাস শুরু করবেন।

‘আমরা সত্যি সত্যিই হতাশ এবং মনক্ষুণ্ণ, এত কঠোর পরিশ্রম করছি এবং আমরা সবকিছু ঠিক করেছিলাম।’

স্বামী গিলবার্তো এবং ছেলে পেদ্রো ও ম্যাথিউসের সঙ্গে জুলিয়ানা রিউ জুনকাইরা। ছবি : সংগৃহীত

‘আমার স্বামী উচ্চ-দক্ষতার পেশায় কাজ করছেন, প্রতি ঘণ্টায় ২৭ ডলারের বেশি উপার্জন করছেন। আমরা আমাদের আগ্রহের অভিব্যক্তি জমা দিয়েছি এবং আমরা গত বছরের মার্চ থেকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি।

দুর্ভাগ্যবশত আমি মনে করি, নিউজিল্যান্ড হয়তো অনেক ভালো মানুষকে হারাবে। আমরা নিউজিল্যান্ডকে ভালোবাসি কিন্তু এখানে বসবাসের কোনো উপায় না থাকলে আমাদের বিকল্প বিবেচনা করতে হবে।’

‘আপনি যদি ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট পড়েন, এখানে পিএইচডি করার বেশ কিছু সুবিধা আছে- তার মধ্যে একটি ছিল যখন আপনি আপনার পিএইচডি শেষ করেন, তখন পর্যন্ত আপনার বসবাসের আবেদন করার জন্য চাকরির প্রস্তাবেরও প্রয়োজন ছিল না, তাই এটি আবাসস্থল পেতে একটি সত্যিই ভালো উপায়।’