পুতিন-বাইডেন বৈঠকে অগ্রগতি সামান্য

Looks like you've blocked notifications!
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বৈঠক করেছেন। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে তাঁদের আলোচনার প্রশংসা করেছেন। তবে, ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের এই বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে খুব সামান্য। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য উঠে এলেও তেমন বড় ধরনের কিছু হয়নি। বাইডেন এটাও বলেছেন, রাশিয়া নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধ চায় না।

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বাইডেন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং তাঁরা দুজনই ‘একই সুরে কথা বলেছেন’।

বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই নেতার মধ্যে জেনেভায় আলোচনা প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল, যদিও সেটা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম।

বাইডেন বলেছেন, তাঁদের কথা বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করার দরকার নেই। এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে।

জো বাইডেন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনকে নিজের পছন্দের স্টাইলের বিশেষভাবে তৈরি এক জোড়া এভিয়েটর সানগ্লাস এবং বাইসনের (বন্য ষাঁড়) একটি স্ফটিকের ভাস্কর্য উপহার দেন।

তবে পুতিন বাইডেনকে কোনো উপহার দিয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।

এর আগে ২০১৮ সালে পুতিন ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে একটি বৈঠক শেষে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন।

এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

দুপক্ষ আরও জানিয়েছে, তারা একে অপরের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূতদের নিয়োগের অনুমতি দেবে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আসার পর গত মার্চে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

তবে, সাইবার নিরাপত্তা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির—যিনি আড়াই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত— ভবিষ্যতসহ অন্যান্য ইস্যুতে চুক্তি হওয়ার হালকা আভাস দেখা গেছে।

বাইডেন জানান, নাভালনির কারাগারে মৃত্যু হলে রাশিয়ার জন্য ‘ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে।

পুতিন-বাইডেন কী আলোচনা করেছেন?

শীর্ষ সম্মেলনের আগে উভয় পক্ষই বলেছিল, তাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে রয়েছে।

পুতিন বন্দি বিনিময়ের বিষয়েও একটি সম্ভাব্য চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন। পুতিন বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন আপস করা যাবে।

সাইবার-আক্রমণ ইস্যুতে পুতিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ায় হওয়া বেশির ভাগ সাইবার-আক্রমণের উৎস যুক্তরাষ্ট্র।

পানি বা জ্বালানিশক্তির মতো জটিল অবকাঠামোগুলোকে অবশ্যই হ্যাকিং বা অন্যান্য আক্রমণের বাইরে রাখতে হবে বলে পুতিনকে বলেছেন বাইডেন।

বাইডেন বলেন, ‘আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে বলেছি যে, যদি আপনার তেলক্ষেত্রের পাইপলাইন আটকে কেউ মুক্তিপণ দাবি করে, তখন আপনার কেমন লাগবে?’ বাইডেন আরও বলেন, রাশিয়া এই ‘মৌলিক নিয়মগুলো’ লঙ্ঘন করলে যুক্তরাষ্ট্র পালটা জবাব দেবে।

বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিবাদ করার অধিকারসহ মানবাধিকার ইস্যুতে তীব্র মতভেদ ছিল।

ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি নাভালনি ইস্যুতে মার্কিন উদ্‌বেগ উড়িয়ে দিয়েছেন। নাভালনি সম্প্রতি ২৪ দিনের অনশন করেছেন বলে জানা গেছে।

পুতিন বলেছেন, নাভালনি আইন মানেননি এবং তিনি জানতেন যে, জার্মানিতে চিকিৎসা করার পর রাশিয়ায় ফিরে এলে তিনি কারাবন্দি হবেন।

নাভালনি বলেছিলেন, পুতিনের আদেশে তাঁকে নার্ভ এজেন্ট বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। যদিও পুতিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পুতিন বলেছেন, রাশিয়া তার অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা বা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতো অশান্ত পরিস্থিতি চায় না।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার সম্পর্কে পুতিনের মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন জো বাইডেন এবং বলেন, মানবাধিকার ‘সবসময় আলোচনার টেবিলে থাকবে’।

রাশিয়া কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইবে—জানতে চাইলে জো বাইডেন বলেন, রাশিয়া ‘এখন খুব, খুব কঠিন একটি অবস্থানে রয়েছে’।

জেনেভা ত্যাগ করার আগে সাংবাদিকদের বাইডেন আরও বলেন, ‘চীন রাশিয়াকে পিষছে। রাশিয়া এখন বড় শক্তি হিসেবে থাকতে মরিয়া।’

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিনি পুতিনকে বিশ্বাস করেন কি না। এর জবাবে  বাইডেন মাথা নাড়েন।

তবে হোয়াইট হাউস এক তাৎক্ষণিক বার্তায় জানিয়েছে, বাইডেন ‘খুব স্পষ্টভাবে কোনো প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি, তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে সাধারণভাবেই মাথা নেড়েছেন।’

যখন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন,  বাইডেন কেন বিশ্বাস করেছিলেন যে, পুতিন তাঁর আচরণ পরিবর্তন করতে পারেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতে বেশ বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি যদি তা বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনি ভুল জায়গায় কাজ করছেন।’ পরে অবশ্য বাইডেন এজন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।

বিবিসির মস্কোর সংবাদদাতা সারা রেইনসফোর্ড বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার বোঝাতে চেয়েছেন যে, রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তাদের অর্থনীতি ছোট হলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়ার যথেষ্ট গুরুত্ব থাকার কারণেই জো বাইডেন আলোচনায় এসেছেন।

একজন যোগ্য প্রতিপক্ষ

পুতিন-বাইডেনের এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে কী লাভ হবে? বিবিসির উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের সম্পাদক জন সোপেল বলেন, ‘আমি মনে করি, জো বাইডেন এখানে সফলতা দেখতে পাবেন, কারণ এই বৈঠকে প্রায় সব ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

“আমি মনে করি, বাইডেন তাঁর দেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’ যার অর্থ ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্প নই’। আমি মনে করি, বাইডেন তাঁর সংবাদ সম্মেলনে সেই বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছেন”, যোগ করেন জন সোপেল।

জো বাইডেন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন।

বাইডেন বলেছেন, ‘মানবাধিকার, সাইবার হামলাসহ যাবতীয় ইস্যুতে রাশিয়া যদি যুক্তরাষ্ট্র যা চায় তা না করে, তাহলে আমার পালটা প্রতিক্রিয়া জানাব।’

তবে বাইডেন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

জন সোপেল বলেন, “আমি নিশ্চিত পুতিন মস্কোতে ফিরে গিয়ে ভাববেন : ‘ঠিক আছে, তিনি (বাইডেন) এই এই কথা বলেছেন। তাহলে তিনি এসব নিয়ে কী করতে যাচ্ছেন?’”

জন সোপেল আরও বলেন, ‘পুতিন পশ্চিমা নেতাদের আগেও দেখেছেন। সম্ভবত পুতিন ভাবছেন যে, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য প্রেসিডেন্টদের চেয়ে আলাদা।’

‘তবে আমার মনে হয়, পুতিন তাঁর সীমা যাচাই করে দেখবেন, এবং বাইডেনকে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিনি কীভাবে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।’