প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী লন্ডনের পুলিশ, দাবি পর্যবেক্ষক দলের

Looks like you've blocked notifications!
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের ছবি রয়টার্সের

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নগর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এই শহরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। যদিও সংস্থাটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী, নারীবিরোধী ও সমকামী বিদ্বেষী বলে দাবি করেছে তাদেরই একটি পর্যবেক্ষক দল। আজ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এ দাবি করে পর্যবেক্ষক দলটি বলেছে, ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে চাপের মুখে রয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন প্রধান। খবর রয়টার্সের।

সারা এভার্ড নামে এক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ২০২১ সালে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সদস্যকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত। একজন পুলিশ সদস্যের এই ঘটনায় বিস্মিত হয় গোটা দেশটির মানুষ। এরপরেই তৎকালীন মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধানকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর কর্মসংস্কৃতি বা মনোভাব পরিবর্তনে কী করা যায় তা এই কমিশন সুপারিশ করবে।

প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষক দলটি বলেছে, ‘লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বর্ণবাদী, খোলামেলা যৌনাচার ও সমকামী বিরোধী। অভ্যন্তরীণভাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখানো হয় না। এমনকি, কমিনিউটি ও পুলিশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও কোনো জ্ঞান দেওয়া হয় না।’ নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যর্থ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

পুলিশের বিষয়ে গঠিত ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন ব্রিটেনের উচ্চ পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা লুইস কেসি। এই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘প্রতিবেদনে মেট পুলিশের গুরুত্বর ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। সংস্থাটির বিশাল সংস্কার প্রয়োজন।’

১৯৯৯ সালে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর স্টিফেন লরেন্সকে হত্যার অভিযোগ উঠে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের ওপর। ওই সময় শহরটির পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছিল। এর দুদশক পর আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোপলিটন পুলিশকে বর্ণবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো।

ব্রিটেনের রাজধানীতে পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে জানিয়ে পর্যবেক্ষণ দলের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বাহিনীকে ঠিক করতে সবচেয়ে বড় বাধা তাদের রক্ষণাত্মক সংস্কৃতি। নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চাই না সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে লুইস কেসি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনটি আপনারা যেভাবে দেখুন না কেন, আমাদের প্রমাণগুলো অনুযায়ী এই বাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট ও বৈষম্যমূলক আচরণ করে।’

বিষয়টি নিয়ে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও ব্রিটেনের জ্যৈষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা মার্ক রওয়েলি বলেন, ‘আমরা লন্ডনবাসীদের হতাশ করেছি। আমরা আমাদের নিজেদের ফ্রন্টলাইনকে নিচে নামিয়ে দিয়েছি, এই প্রতিবেদনে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত।’

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্তমান কমিশনার আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে মানুষের সব আবেগ উঠে এসেছে। দ্রুতই অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হবে। আমি বলছি না, সবকিছু ঠিক করে দিতে পারব। তবে, বাহিনীকে একটি নিয়মশৃঙ্খলার ভেতরে আনার চেষ্টা করব।’

৩৬০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ লন্ডন পুলিশ বাহিনীর উন্নতির জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাহিনীর নারী সদস্যদের রক্ষা করা ও শিশুদের জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন।

লুইস কেসি বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার কোনো নারী সহকর্মী অভিযোগ করলে সেটি সমাধানে গড়ে ৪০০ দিন করে সময় নিয়েছে লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ।’