বসনিয়ার জঙ্গলে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে আইওএমের বার্তা

Looks like you've blocked notifications!
সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বসনিয়ার জঙ্গলে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের করুণ অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। ছবি : রয়টার্স

সম্প্রতি ডয়চে ভেলেসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বসনিয়ার জঙ্গলে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের করুণ অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডয়চে ভেলে জানায়, গত কয়েক দিনে ডয়চে ভেলের সংবাদ প্রকাশের পর জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা—আইওএমের বাংলাদেশ অফিস থেকে গত মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সরকার চাইলেই তো তাদের ফিরিয়ে আনতে পারে না। এ ছাড়া যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁরা কি ফিরে আসতে চান? সেটাও তো আমরা নিশ্চিত নই। ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, তাঁরা (জঙ্গলে আটকেপড়া ব্যক্তিরা) বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ (বাংলাদেশ) সরকারকে নিতে হবে। কিন্তু সেখানেও নানা জটিলতা আছে। সেই প্রক্রিয়াটি কী হবে? এই ফিরিয়ে আনার খরচ কে দেবে? এমন হতে পারে যাঁরা অবৈধভাবে সেখানে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনবে সরকার, কিন্তু দেশে ফেরার পর খরচের টাকা তাঁদেরই দিতে হবে। আবার যাঁরা অবৈধভাবে বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের যদি এভাবে সরকার ফিরিয়ে আনতে শুরু করে, তাহলে অবৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, এমনটিও কেউ মনে করতে পারে। ফলে সরকারকেই একটা পথ বের করতে হবে। কারণ, যাঁরা সেখানে আছেন, তাঁরা তো বাংলাদেশের নাগরিক, এটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না।’

জানা গেছে, অবৈধপথে ইতালিতে ঢুকতে অনেকেই নতুন রুট—বসনিয়া, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নিয়েছে। মূলত ক্রোয়েশিয়া থেকে অ্যাড্রিয়াটিক সাগর পাড়ি দিয়ে লোকজনকে ইতালি পাঠাচ্ছে চক্রটি। নতুন এই পথে ইতালি যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা গত তিন বছরে বেড়ে গেছে পাঁচ গুণ। গত ৯ মাসে দুই হাজার ৫৫৩ জন বাংলাদেশি বসনিয়া পৌঁছেছেন। সেখানে তাঁরা নাম নিবন্ধন করেছেন। এঁদের শেষ গন্তব্য ইতালি। আইওএম কর্মকর্তারা জানান, বৈধ-অবৈধ যাই হোক, বসনিয়ায় এসে অভিবাসীদের নাম নিবন্ধন করতে হয়। গত তিন বছরে নিবন্ধনকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।

ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, ‘ফিরিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া আছে। বহু অবৈধ অভিবাসীকে সরকার ফিরিয়ে আনছে। কত মানুষকে এভাবে আনবে? আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করা হোক। সরকার ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তাঁরা তো আসতে চান না। যখন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে, তখন দেখা যাচ্ছে তাঁরা সেখান থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন। ফলে যাঁরা সেখানে গেছেন, তাঁরা জেনেবুঝেই গেছেন। পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত তাঁরা খরচ করেছেন। এখন দেশে ফিরে তাঁরা কী করবেন? এ কারণে অবৈধ অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারেও সচেতনতা দরকার। আপনি দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও দেখবেন অনেকে অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। ফলে পরিবার থেকেই সচেতনতা দরকার।’

ডয়চে ভেলে আরো জানিয়েছে, বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর মহাপরিচালক শামসুল আলম বলেছেন, ‘প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এখনো বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলেনি। আইওএম অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। তখন আমরা এ বিষয়ে বলতে পারব।’

এদিকে ডয়চে ভেলে দাবি করেছে, বসনিয়ার জঙ্গলে আটকে থাকাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।