হিমাচলে দুদিনের বৈঠক

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সংলাপ শুরু আজ, যোগ দিচ্ছে আরএসএস

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ ও ভারতের নীতিনির্ধারক, এমপি এবং একাধিক থিঙ্কট্যাঙ্কের মধ্যে দুদিনের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আজ শুক্রবার থেকে ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলায় শুরু হচ্ছে। বার্তা সংস্থা বাসস এ খবর জানিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ডায়লগ’ নামের এ সংলাপে আরএসএস নেতারাও এবার যোগ দিচ্ছেন। আরএসএস ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক সংগঠন হিসেবে পরিচিত।

‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ডায়লগ’-এ ভারতের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন, এমন একাধিক রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, সম্প্রতি যেসব বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্বস্তি বয়ে এনেছে, সেগুলো কীভাবে আরও ভালোভাবে ‘অ্যাড্রেস’ (মোকাবিলা) করা যায়, তা নিয়েও শিমলায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হবে।

ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী সংলাপটিকে আয়োজকদের অনেকেই অবশ্য পুরোপুরি ‘ট্র্যাক-টু’ বলতে রাজি নন, কারণ উভয় দেশের মন্ত্রী-আমলারাও নিয়মিত এতে যোগ দিয়ে থাকেন।

এবারের সংলাপে থাকছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, যথাক্রমে শাহরিয়ার আলম ও রাজকুমার রঞ্জন সিং।

আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং তাঁর পূর্বসূরি তারিক করিম। আরও দেখা যাবে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মোবিন চৌধুরীকেও।

মৈত্রী সংলাপের লক্ষ্য কী?

সাত-আট বছর ধরে এ প্ল্যাটফর্মটি মূলত দুদেশে ক্ষমতাসীন দুই দল—বিজেপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মতবিনিময়ের মঞ্চ হিসেবে কাজ করে এসেছে।

এবারের সংলাপে যাঁরা বিজেপির পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম দলের জ্যেষ্ঠ এমপি এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর।

এম জে আকবর বলেন, ‘এ উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। একবার ভারতে, অন্যবার বাংলাদেশে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হচ্ছে। আর, বেশ উঁচু পর্যায়েরই প্রতিনিধিত্ব থাকছে।’

‘প্রতি বছর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো আসে, যেগুলো আমাদের বিরক্ত করে, স্বভাবতই সেগুলো নিয়েই এখানে কথাবার্তা হয়। সোজা কথায়—দুটো বন্ধু দেশ নিজেদের মধ্যে সেরা সম্পর্কের লক্ষ্যে সন্দেহের মেঘগুলো দূর করার চেষ্টা করে’,' বলেন এম জে আকবর।

গত বছর অক্টোবরে দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে মণ্ডপ ভাঙচুর বা হিন্দু নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে ঠিক এ রকমই অস্বস্তি বয়ে এনেছিল।

সেসব নিয়েও শিমলায় আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নে এম জে আকবর বলেন, ‘ওটা তো... আসলে যেকোনো ইভেন্ট বা ঘটনাই তো কন্ডিশনস বা শর্ত তৈরি করে। আমাদের দেশেও একই ব্যাপার হয়। কেউ একটা কিছু ভাষণ দিল বা কিছু বলল, অন্য পাড়ে তার অভিঘাত হয়, বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আর তা ছাড়া আমরা দুটো কাছাকাছি ও ঘনিষ্ঠ দেশ, দুটোই স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ, ফলে কিছু-না-কিছু (আলোচনা) হওয়াই তো স্বাভাবিক।’

কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে গত বছর তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল আরএসএসের মুখপত্র ‘দ্য অর্গানাইজার’। ওই পত্রিকার প্রধান সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকারও এই প্রথম বারের মতো ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংলাপে যোগ দিচ্ছেন।

এ ছাড়া থাকছেন আরএসএস কর্মসমিতির প্রভাবশালী সদস্য রাম মাধব। তিনি প্রায় আট বছর ধরে এ সংলাপ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

রাম মাধব অবশ্য বলছেন, এ প্ল্যাটফর্মে দুই দেশের একান্ত নিজস্ব বা অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। কাজেই কুমিল্লার ঘটনা শিমলায় কোনো প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন না।

আরএসএসের যোগদান

বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত বলেন, সংলাপে আরএসএসের থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনার পটভূমিতে।

শ্রীরাধা দত্তের কথায়, ‘সম্প্রতি বোধ হয় বরিশালে একটি মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-ওদিক এরকম ঘটেই চলেছে। যদিও আমাদের সবারই ধারণা—বাইরে থেকে সরকারবিরোধী শক্তিরাই এগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে করাচ্ছে।’

কিন্তু, এ পটভূমিতে একটা সংলাপের অবকাশ ও প্রয়োজন বোধ হয় থেকেই যায়—যেখানে পরস্পরের মধ্যে খোলাখুলি কথা বলা যায়। সরকারি প্ল্যাটফর্মে যে কথাগুলো বলা যায় না, সেগুলো বলার জন্য আলাদা একটা জায়গা লাগে বলে মন্তব্য করেন শ্রীরাধা দত্ত।

‘মৈত্রী সংলাপের আগের প্রায় সবগুলো রাউন্ডে অংশ নেওয়ার সুবাদে বলতে পারি—এ প্ল্যাটফর্মটা আমাদের ঠিক সেই সুযোগটাই করে দেয়। বিশেষ করে যখন আমরা দুপক্ষের সবাই সবাইকে খুব ভালো করেই চিনি’, বলেন শ্রীরাধা দত্ত।

শ্রীরাধা দত্ত আরও বলছেন, ‘এ ক্রিটিক্যাল সময়ে এক দিকে আরএসএস এবং অন্য দিকে বাংলাদেশের একটা হেভিওয়েট টিম—সে দেশের মন্ত্রী, এমপিরাও যেখানে থাকছেন, তাতে মনে হচ্ছে—দুপক্ষই নিজেদের সমস্যাগুলো মেটানোর একটা আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছেন।’

বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি আলোচনা

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং সংসদ সদস্য মির্জা আজম ও অসীম কুমার উকিলও এ সংলাপে থাকছেন।

ঢাকার ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ’ দিল্লির ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করছে।

এ আলোচনায় যে তিনটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা থিঙ্কট্যাঙ্ক ভারতের পক্ষ থেকে থাকছে, তাদের অন্যতম শিলং-ভিত্তিক ‘এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স’। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সব্যসাচী দত্ত বলছিলেন, বাণিজ্য বা কানেক্টিভিটি আরও বাড়াতে কিংবা দুদেশের মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতেও তাঁরা কাজ করার চেষ্টা করবেন।

সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘এটা আসলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে উত্তরণের চেষ্টা।’

“সম্প্রতি বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে দুদেশের সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। বহু বন্দর, আইসিপি তৈরি হয়েছে বা রেল, নদী ও সড়কপথে নতুন নতুন রাস্তা খুলেছে। এখন এগুলোকে ভিত্তি করে কীভাবে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লগ্নি বাড়াতে পারি, এগুলোর ওপর ‘বিল্ড-আপ’ করতে পারি, তা নিয়েই আলোচনা হবে’, বলেন সব্যসাচী দত্ত।

‘পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট এবং দুদেশের মানুষের মধ্যে যে জায়গাগুলোয় ভরসার অভাব আছে, আমি নিশ্চিত সে দিকেও দৃষ্টি দেবে এ সংলাপ,’ যোগ করেন এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের সব্যসাচী দত্ত।

উদ্যোক্তারা বলছেন, নানা কারণে সীমান্তের দুপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কিছু উপাদান রয়ে গেছে, সে ইস্যুগুলোকেই মোকাবিলার চেষ্টা করবে শিমলার সংলাপ।