বাইডেন এখন ব্রাসেলসে, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে

Looks like you've blocked notifications!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রাসেলসে পৌঁছে এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নামছেন। ছবি : সংগৃহীত

ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় বুধবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং ইউক্রেনে আক্রমণ করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন আরও নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং কোনো রকম ফাঁক-ফোকর না রেখে, কঠোরভাবে সেগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এবং বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলোকে আরও কঠিন করতে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন।’

অন্যদিকে, বুধবার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো’র মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ‘আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন হুমকি।’ ন্যাটো জোট নেতারা আজ বৃহস্পতিবারের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রতি আরও সমর্থন ঘোষণা করতে পারেন।

স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমি আশা করি, নেতৃবৃন্দ জোটের পূর্ব অংশে, স্থলে, আকাশে ও সমুদ্রে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সব এলাকায় ন্যাটোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সম্মত হবেন।’

ন্যাটো’র মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপ হবে বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় ন্যাটো’র চারটি নতুন সামরিক গ্রুপ মোতায়েন করা।’

ন্যাটো জোটপ্রধান আরও বলেন, ন্যাটো’র নেতারা রাশিয়ার দিক থেকে পারমাণবিক, রাসায়নিকসহ অন্যান্য হুমকি মোকাবিলায় একটি চুক্তি ঘোষণা করতেও প্রস্তুত।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ বৃহস্পতিবারের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়াল ভাষণ দেবেন। তিনি এ বৈঠকের আগেই বলেছেন—তিনি আশা করেন, পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়াবেন, এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করবেন।

রুশ বাহিনী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণাত্মক অভিযান চালাচ্ছে। তারা রুশ সেনাদের নিশানা করছে এবং কিছু ক্ষেত্রে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার বলেছে—তাদের বাহিনী প্রবল যুদ্ধের পর রাজধানী কিয়েভের শহরতলীর মাকারিভ পুনরুদ্ধার করেছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে খারকিভের ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামে এবং সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে খেরসন শহরের কাছাকাছি এলাকায় পাল্টা আক্রমণ চালাতে দেখা গেছে।

তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের পাল্টা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। যদিও তাঁরা বলেছে—সে দেশের কিছু অংশে যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা অবশ্য রাশিয়ার কথিত ‘সামরিক অভিযানের’ অবস্থা সম্পর্কে বেশি স্পষ্টবাদী ছিলেন।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইউক্রেন নিয়ে ক্রেমলিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাশিয়া এখন পর্যন্ত স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে মন্তব্য করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আজভ সাগরে রাশিয়ার জাহাজগুলো ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। শহরটি কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের মধ্যে রয়েছে।’

তবে ওই কর্মকর্তা একই সঙ্গে বলেন, ‘অন্য গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যায় যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার বাহিনী এখনও জ্বালানি, খাদ্য ও প্রিসিশন-গাইডেড অস্ত্রের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি তাদের মৌলিক সরবরাহের অভাব রয়েছে বলেও মনে হচ্ছে।’

ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি যে, তাদের (রাশিয়ার) কিছু সেনা ফ্রস্টবাইটে (তীব্র তুষারের স্পর্শে শরীরের প্রদাহ) ভুগছেন। কারণ, তাঁদের কাছে উপযুক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। সেনাদের অনেকে আসলেই কষ্ট পেয়েছেন এবং (যুদ্ধ থেকে) তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআর গত মঙ্গলবার বলেছে, ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মলদোভা ও হাঙ্গেরিতে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্সি কর্পসের মানবিক প্রতিক্রিয়া উপদেষ্টা স্টিভ গর্ডন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো এ মুহূর্তে মানবিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।’

স্টিভ গর্ডন আরও বলেন, যে শহরগুলোয় সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে, সেখানে ‘তিন থেকে চার দিনের বেশি খাদ্যের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুদ নেই।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করেছে—রাশিয়া ইউক্রেনে তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে দিন দিন বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা বাড়াচ্ছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর-পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি  সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘স্পষ্টতই, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে এবং স্পষ্টতই, রাশিয়ার নির্বিচার হামলা বেড়েই চলেছে... (এবং) ততই তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা যা দেখি, তেমনই বর্ণনা করা উচিত। এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, রুশ বাহিনী যুদ্ধাপরাধ করছে।’

ইউক্রেনে হামলা করলেও রাশিয়া বরাবরই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র বা এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিতে পারে।

ভয়েস অব আমেরিকা বলছে—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছেন। হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তারা তা পর্যবেক্ষণ করেছেন।