বাখমুত যুদ্ধের জন্য আরও গোলাবারুদ চান ওয়াগনার প্রধান

Looks like you've blocked notifications!
রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য দলের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। রয়টার্সের ফাইল ছবি

ভাড়াটে রুশ সৈন্যদের (ওয়াগনার মার্সেনারি গ্রুপ) প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন জানিয়েছেন তার বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনে বাখমুত শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।

গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে একটি উঁচু ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যেটাকে তিনি বাখমুত বলে দাবি করছেন। দূরের একটি ভবনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রিগোঝিন ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত শহরের প্রশাসনিক ভবন। এটি এক দশমিক দুই কিলোমিটার দূরে’। কিন্তু ফুটেজটি কোন এলাকায় ধারণ করা তার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি গণমাধ্যম আলজাজিরা।

পেছনের আর্টিলারি বাহিনীর গোলা নিক্ষেপ হওয়ার সময় প্রিগোঝিন বলছিলেন যে, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আরও গোলাবারুদ গ্রহণ করা ‌ও সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য আমার বাহিনীর প্রতি মাসে ১০ হাজার টন গোলাবারুদ প্রয়োজন।’

ওয়াগনার বাখমুতসহ পূর্ব ইউক্রেনের শহরগুলিতে চালানো আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছে যা রাশিয়ার জন্য এক বছরের মধ্যে দীর্ঘতম ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বাখমুতের আশেপাশে দুপক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন পুতিনের মিত্র প্রিগোজিন বলে জানা গেছে। প্রিগোজিন বেশ কয়েকবার রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আগে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় দাবি করেছেন। সম্প্রতি তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন এবং রুশ সামরিক বাহিনীকে তার ‘ভাড়াটে’ বাহিনীর সঙ্গে গোলাবারুদ ভাগ করে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (১১ মার্চ) প্রকাশিত ভিডিওতে প্রিগোঝিন বলেন যে, তিনি রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারদের কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত কিন্তু একই সঙ্গে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উপহাসও করেন তিনি।

প্রিগোঝিন বলেছিলেন যে, তারা অসামান্য সামরিক কমান্ডার। জর্জি ঝুকভ এবং আলেকজান্ডার সুভরভসহ রাশিয়ার শ্রেষ্ঠ সামরিক নেতারা তাদের কাছ থেকে ‘শিখতে পারতো’।

এই সপ্তাহের শুরুতে ওয়াগনার বলেছিল যে তাদের যোদ্ধারা বাখমুতের পূর্ব অংশ দখল করেছে। কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞ বিধ্বস্ত শহরটির প্রতি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। তবে কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন যে, বাখমুতের পতন হলে রুশ বাহিনী আরও পূর্ব দিকে এগিয়ে আসতে পারে।

ইউক্রেনের স্থল বাহিনীর কমান্ডার ওলেকসান্দ্র সিরস্কি শনিবার বলেন যে, বাখমুতের লড়াই ভবিষ্যতের পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতিতে সময় পাওয়া যাবে। সিরস্কি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আসল নায়করা এখন বাখমুতের রক্ষক যারা তাদের কাঁধে পূর্ব বাখমুতকে ধরে রেখেছে’।  

এদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরের পশ্চিম অংশ দখল করে আছে এবং নদীর উপর গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলো ভেঙে দিয়েছে।  বিৃতিতে মন্ত্রণালয় বলে ‘এই এলাকাটি একটি খুনের এলাকায় পরিণত হয়েছে। সম্ভবত পশ্চিম দিকে থেকে সম্মুখ আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা ওয়াগনার বাহিনীর জন্য এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।’

আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের খেরসনে রুশ গোলাগুলিতে তিনজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চলে আরও একজন নিহত হয়েছে। খেরসনের আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিন বলেছেন, শহরের আর্টিলারি গোলাগুলির সময় একজন বয়স্ক মহিলাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

দোনেৎস্কের আঞ্চলিক গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো জানিয়েছেন, দিনের বেলা কয়েক রাউন্ড রুশ গোলাবর্ষণের পর কোন্তিনিভকা শহরে একজন নিহত এবং কমপক্ষে তিনজন বেসামরিক লোক আহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর পর থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়।