ভারতের জনসংখ্যা কত? জানে না দেশটির সরকারও!

Looks like you've blocked notifications!
মুম্বাইয়ে একটি রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে দেশটির জনগণেরা। ছবিটি গত জানুয়ারির ২০ তারিখে তোলা। ছবি : রয়টার্স

আগামী দুই মাসের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। এ সময়ে দেশটির জনসংখ্যা ১৪০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এক বছর বা এর চেয়ে বেশি সময়ের মধ্যেও ভারতের মোট জনসংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। কারণ, এখনও দেশটির সরকার মোট জনসংখ্যা গণনা করতে সক্ষম হয়নি। খবর রয়টার্সের।

প্রতি এক দশক পর পর ভারতে জনশুমারি হয়। সবশেষ ২০১১ সালের দেশটিতে শুমারি হয়। পরের শুমারিটি হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। শুমারিটি শুরু হলেও মহামারির জন্য সেটি এখন থমকে রয়েছে। প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও আনুষঙ্গিক কারণে জনশুমারি কবে নাগাদ শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মসংস্থান, আবাসন, স্বাক্ষরতার হার, অভিবাসনের ধরন ও শিশু মৃত্যুর মতো তথ্য হালনাগাদ করতে পারছে না ভারত সরকার। এর মূলে রয়েছে জনশুমারি।

জনশুমারিকে অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড পলিসির রচনা শর্মা। তিনি বলেন, ‘জনগণের কল্যাণে ব্যয় ও শ্রমশক্তি জরিপের মতো বিষয়গুলো আদমশুমারির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। হালনাগাদ শুমারির তথ্যের অভাবে এক দশকের পুরোনো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানেরগুলো করা হচ্ছে। এতে করে অনেক ভুল তথ্য চলে আসছে।’

ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১১ সালে শেষ জনশুমারি করা হয়। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সরকার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করছে। এতে করে ভোগান্তি বাড়ছে।’ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 

জনশুমারি বিলম্ব হওয়ার কারণ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসের দুই কর্মকর্তা। তাদের মতে, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও নির্ভুল তথ্যের জন্যই এটি বিলম্ব হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জনশুমারি করতে যে অ্যাপের ব্যবহৃত হচ্ছে, তা মোবাইলেফোনে ব্যবহারের জন্য আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। অ্যাপটিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কলাম থাকবে। এটি করতেই দেরি হচ্ছে।’

জনশুমারি বিলম্বের জন্য মোদি সরকারকে দুষছে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। তাদের মতে, রাজনৈতিক কারণেই শুমারি পেছানো হচ্ছে। এতে করে দেশের মোট বেকারত্বের সংখ্যা প্রকাশ পাবে। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মোদি সরকার এমন ভুল করবে না।

কংগ্রেসের মুখপাত্র পাওয়ান খেরা বলেন, ‘এই সরকার তথ্য নিয়ে খেলছে। কর্মসংস্থান, কোভিডে মৃত্যুসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর ইস্যু তারা লুকাতে চাইছে।’ তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্ষমতাসীন পার্টি বিজেপির মুখপাত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমান, আগামী ১৪ এপ্রিলের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা পৌঁছাবে ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ জনে। এ দিনেই জনসংখ্যার দিক থেকে চীনকে পেছনে ফেলবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশটি।

ভারতের ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী, ওই সময় তাদের জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটি। এর মানে ১২ বছরে তাদের জনসংখ্যা বাড়বে ২১ কোটিরও বেশি, যা ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার সমান।

ভারতের শুমারিতে কাজ করে থাকেন দেশটির শিক্ষকেরা। বর্তমানে দেশটিতে তিন লাখ ৩০ হাজার স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলের শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।

২০২১ সালের শুমারি নিয়ে এর দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে একটি পরিকল্পনা করে ভারত সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুই ডজনের বেশি প্রশ্ন নিয়ে ১৬ ভাষায় দুই ধাপে তথ্য সংগ্রহ করবে শিক্ষকেরা। যা শেষ হতে সময় লাগবে ১১ মাস। এরপরেই তথ্যগুলো সরকারি খাতায় জমা পড়বে। পরে সব তথ্য একত্রে করে মাসখানেক পর তা জনসম্মুখে আনা হবে। এতে ব্যয় হবে ১০৫ কোটি মার্কিন ডলার।