ভ্রুণ থেকে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে বায়ুদূষণ : গবেষণা

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার বায়ু দূষণের পুরোনো ছবি রয়টার্স থেকে নেওয়া

বৈশ্বিক সমস্যা বায়ুদূষণ। মানবজীবনের প্রতিটি ধাপকেই প্রভাবিত করে এটি। মায়ের গর্ভে থাকা ভ্রূণ থেকে শুরু করে কিশোর বয়সের জ্ঞান বিকাশ ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে বায়ুদূষণ। আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) লন্ডন থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি দাবি করা হয়েছে। খবর আল-জাজিরার।

মানবজীবনে বায়ুদূষণের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণাটি চালিয়েছে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের পরিবেশ গবেষণা দল। দীর্ঘ এক দশক ধরে ৩৫ হাজার গবেষণার ওপর পুণরায় জরিপ চালিয়ে এমনটি জানিয়েছে তারা।

ইম্পেরিয়াল কলেজের পরিবেশ গবেষণা দলটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), দ্য ইউকে কমিটি অন দ্য মেডিকেল ইফেক্টস অফ এয়ার পলিউশন, দ্য রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস, দ্য হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট, দ্য ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারসহ ৩৫ হাজার গবেষণার ওপর কাজ করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নতুন করে তারা জানতে পেরেছেন মানুষের মস্তিষ্ক ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চরমভাবে প্রভাব ফেলে বায়ুদূষণ। এমনকি গর্ভাবস্থায় থাকা মানুষের ভ্রূণটিতেও এটি প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থা বা প্রাথমিক জীবনের প্রভাব সারাজীবন থেকে যায়।

এতে আরও বলা হয়, বায়ুদূষণ নবজাতকের স্বাস্থ্য, ওজন, গর্ভপাত ও মৃতপ্রসবের জন্য অনেকটা দায়ী। মা দূষিত বাতাস নেওয়ার ফলে গর্ভে থাকা ভ্রূণ দুর্বল হতে পারে। এটি শিশুর বিকাশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দূষিত বাতাসের সঙ্গে থাকা রাসায়নিকগুলো গর্ভবতী নারীর রক্তে প্রবেশ করে এর প্রবাহকে পরিবর্তন করতে পারে, যা ভ্রূণের বৃদ্ধিকে ধীর করতে পারে।

ডব্লিউএইচওর তথ্য মতে, প্রতি বছর দুই কোটি শিশু কম ওজন নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আর দেড় কোটি শিশু উপযুক্ত সময়ের আগে জন্ম নেয়।

শুধুমাত্র মায়ের ক্ষতিই করে না বায়ুদূষণ, পুরুষদের বীর্যেও এর প্রভাব অপরিসীম। দূষিত বাতাসের কারণে পুরুষদের বীর্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যায়।

ইম্পেরিয়াল কলেজের পরিবেশ গবেষণা দলটি গবেষণা প্রতিবেদনে আরও জানায়, বায়ুদূষণ শিশুদের ফুসফুসের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়। এতে করে উচ্চ রক্তচাপে ভুগে তারা। এমনকি এটি তাদের জ্ঞান বৃদ্ধির গতি হ্রাস করে ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

গবেষক দলটি বলছে, আট থেকে নয় বছর বয়সী দুই হাজার শিশুকে তারা পেয়েছে, যাদের কি না তুলনামূলকভাবে ফুসফুসের বৃদ্ধি পাঁচ শতাংশ কম হয়েছে। এর মূলে রয়েছে ডিজেল থেকে উৎপন্ন হওয়া নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড।

দূষিত বায়ুর ফলে অনেক মানুষ হাঁপানিতে ভুগছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লন্ডনের দূষিত বায়ুর কারণে হাঁপানি ও ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এক হাজার ৭০০ এর বেশি রোগীকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সাত শতাংশই ছিল শিশু।

এ ছাড়া বায়ুদূষণের জন্য শিশুদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঘটনাসহ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে এবং পরবর্তী জীবনে শিশুরা কার্ডিওভাসকুলার রোগে ভুগতে পারে।