মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ফের হামলা, নিহত ২৮

Looks like you've blocked notifications!
মিয়ানমারের শান রাজ্যের নান নিন গ্রামের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ছবিটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী কেএনডিএফের ফেসবুক পেজে দেওয়া ভিডিও থেকে নেওয়া

মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি মঠে হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৮ বেসামরিক। দেশটির একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বরাতে আজ সোমবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ক্যারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ) জানিয়েছে, শনিবার সেনারা নান নিন গ্রামে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলে নেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে আন্দোলন করছে গণতন্ত্রপন্থীরা। সম্প্রতি সময়ে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেড়েছে।

বিবিসি বলছে, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো, শান রাজ্যে ও থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র লড়াই চলছে।

কেএনডিএফ জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে মিয়ানমারের সামরিক বিমান বাহিনী ও গোলন্দাজ বাহিনী গ্রামটিতে প্রবেশ করে এবং মঠে লুকিয়ে থাকা গ্রামবাসীদের খুঁজে বের করে। পরে তাদের হত্যা করে।

সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, সম্প্রতি কেএনডিএফ সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া সংখ্যালঘুগোষ্ঠী যারা কিনা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তারা ২১টি মরদেহ শনাক্ত করেছে। মরদেহগুলো মঠের ভেতরে স্তূপ করে রাখা হয়। এ ছাড়া ভিডিওতে মরদেহগুলোতে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখা গিয়েছে। এমনকি, মঠের দেয়ালেও গুলি দেখা যায়।

স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য কান্তাওয়ার্দিকে এক সাক্ষাৎকারে কেএনডিএফ মুখপাত্র বলেন, ‘মঠ থেকে গ্রামবাসীকে বের করে এর বাইরেই লাইন করা হয় এবং তাদের নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারা ভিক্ষুদেরও ছাড় দেয়নি।’

সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বিবিসিকে জানিয়েছে নান নিন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা আরও সাতটি মরদেহ তারা শনাক্ত করেছে। এমনকি, আশেপাশের কিছু বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছে তারা। ‘

কেএনডিএফ বলছে, গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ছিল—বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকায় গ্রামটিতে সামরিক বাহিনী কোনো হামলা করবে না। তবে, তেমনটি হয়নি। সামরিক বাহিনীর হামলার আগে অনেক গ্রামবাসী সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

প্রতিবেদনে বিবিসি আরও জানিয়েছে, স্বাধীনভাবে বিষয়টি যাচাই করা অনেক কষ্টসাধ্য। তবে, বেসামরিক লোকদের ওপরে সামরিক বাহিনীর হামলা দেশটিতে নতুন নয়। জান্তা সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই দেশটিতে এমনটা হরহামেশায় ঘটছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার চলতি বছর একটি নির্বাচন দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এটি তাদের জন্য বৈধতা এনে দেবে বলে মনে করছে তারা। কিন্তু, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা সত্ত্বেও তাদের শাসনের বিরোধীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা, এতে নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরেই গৃহযুদ্ধ চলছে, আর ২০২১ এরপর এটি আরও ছড়িয়ে পড়েছে। জান্তা সরকার ক্ষমতায় নেওয়ার পর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৫ লাখেরও বেশি লোক। ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৮০ লাখ শিশু স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এবং এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে।