মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩ অভিবাসী নিহত

Looks like you've blocked notifications!
মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে এক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫৩ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয়েছে। ছবি : রয়টার্স

মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে এক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের উদ্দেশে যাওয়ার সময় তাদের বহনকারী ট্রাকটি উল্টে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় চিয়াপাস প্রদেশের সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সির প্রধান লুইস ম্যানুয়েল গারসিয়া জানান, টাক্সটলা গুতেরেস শহরের বাইরে সড়কের একটি তীক্ষ্ণ বাঁকে ট্রাকটি উল্টে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৫৩ বলে জানিয়েছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুর্ঘটনায় আহতেরা আর্তনাদ করছিলেন। দুর্ঘটনার পরপরই মেক্সিকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান বলে জানান তিনি।

দুর্ঘটনায় আহতদের ওই এলাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া রয়টার্সের একাধিক ছবিতে দেখা যায়, একটি সাদা বড় ট্রাক মহাসড়কে এক পাশে কাত হয়ে পড়ে আছে এবং কিছু লোককে চিকিৎসা ও শুশ্রূষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছবিতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মৃতদেহের সারিও দেখা যায়।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন নারী একটি শিশুকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন। দুজনের শরীরই রক্তে মাখামাখি। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের ভেতরে ব্যথায় কুঁকড়ে আছেন এক ব্যক্তি, তেমন নড়াচড়া করতে পারছেন না। আর, উদ্ধারকর্মীরা ট্রাকের ভেতর থেকে মরদেহগুলো বের করছেন।

চিয়াপাস সিভিল প্রোটেকশন সংস্থা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে।

এক টুইটবার্তায় মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

মধ্য আমেরিকার দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা সাধারণত মেক্সিকো হয়ে মার্কিন সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। এর জন্য তারা পাচারকারীদের মাধ্যমে কখনও কখনও বড় ট্রাকে গাদাগাদি করে অত্যন্ত বিপৎসংকুল পথে মার্কিন সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হয়।

গুয়াতেমালা প্রশাসনের মুখপাত্র কেভিন লোপেজ স্থানীয় মিলেনিও টেলিভিশনকে বলেন, ‘এ দুর্ঘটনা আমাদের দেখাল যে, অস্বাভাবিক পন্থায় অভিবাসন সর্বোত্তম উপায় নয়।’

দুর্ঘটনায় গুয়াতেমালার কেউ হতাহত হয়েছে কি না, সে তথ্য অবশ্য দিতে পারেননি কেভিন লোপেজ।

অন্যদিকে, এল সালভাদরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা হিল জানিয়েছেন—সালভাদরের মারা গেছে কি না, তাঁর সরকার সে খোঁজ নিচ্ছে।

মেক্সিকোর জাতীয় অভিবাসন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তারা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজনের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে এবং ভিসা দেবে। আর, চিয়াপাস প্রদেশের গভর্নর রুতিলিও এসকান্দন বলেছেন—দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি করতে হবে।

মেক্সিকো হয়ে ট্রাকে গাদাগাদি করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পথ পাড়ি দিতে দেখা দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের জন্য নিয়মিত ঘটনা। গত মাসে মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলে ৬০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দুটি ট্রাকের পেছনে লুকানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

গুয়াতেমালার পার্শ্ববর্তী চিয়াপাস প্রদেশ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি অন্যতম যাত্রাপথ।

মধ্য আমেরিকার দারিদ্র্য ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাঁচতে প্রতি বছর লক্ষাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর জন্য মেক্সিকো পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকেই পাচারকারীদের অর্থ দিয়ে দীর্ঘ পথে গাদাগাদি করে এবং বিপজ্জনকভাবে ট্রাকে করে যাত্রা করে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর দুর্ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ উল্লেখ করে টুইটারে লিখেছেন, তিনি এজন্য ‘গভীরভাবে শোকাহত’।