ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট

যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ট্রাম্প : কমলা হ্যারিস

Looks like you've blocked notifications!
ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের মঞ্চে আজ বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্সের (ডানে) মুখোমুখি হন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ছবি : রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসকদের সঙ্গে সখ্য গড়েছেন। ইউটা অঙ্গরাজ্যের সল্টলেক সিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের মঞ্চে আজ বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্সের প্রতি এভাবেই তোপ দাগেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস।  

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে তর্কযুদ্ধ শুরু হতেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক ইস্যুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন কমলা হ্যারিস। আর মাইক পেন্সের দিকে ছুড়ে দেন একাধিক প্রশ্ন।

কমলা হ্যারিস এদিন রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সখ্যের ইস্যুটি খুঁচিয়ে তোলেন। কমলা হ্যারিস বলেন, ‘২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে এখন আমরা সবাই জানি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে একজন স্বৈরশাসকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ট্রাম্পের জন্য ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হয়েছে।’ 

এরপর কমলা হ্যারিস আরো বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় হয়েছে এবং এর জন্য দায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। দেশে উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রে তিন লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। কৃষকেরা দেউলিয়া হওয়ার পথে।’ 

চীন ইস্যুতে কমলা হ্যারিসের আক্রমণকে প্রতিহত করে মাইক পেন্স পাল্টা দাবি করেন, ট্রাম্প প্রশাসন করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চীন থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করে দেয়। 

এদিকে নির্বাচনের আগেই মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করতে ট্রাম্পের আপ্রাণ চেষ্টার ইস্যুটি এদিন বিতর্কে উঠে আসে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিনসবার্গের মৃত্যুর পর তাঁর শূন্য আসনে দ্রুত কাউকে বসানোর জন্য চেষ্টা চলছে। রুথ ব্যাডার গিনসবার্গ গর্ভপাত, স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ইস্যুতে বিশেষ সোচ্চার ছিলেন। 

রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মাইক পেন্স তাঁর কট্টর ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য বিশেষ পরিচিত। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এরই মধ্যে গর্ভপাতের বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছেন এবং একই সঙ্গে ভোটারদের এই বলেও সতর্ক করেছেন যে ডোমোক্র্যাটরা ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিপক্ষে। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস গর্ভপাতের স্বাধীনতার পক্ষে। এ নিয়েও দুজনের মধ্যে এদিন বিতর্ক হয়। কমলা হ্যারিস এ বিষয়ে একাধিকবার নিজের মতামত স্পষ্ট করেছেন। 

এ ছাড়া কমলা হ্যারিস শুধু গর্ভপাত নয়, সমলৈঙ্গিক বিয়েরও ব্যাপক সমর্থক। অন্যদিকে, ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর থাকাকালে মাইক পেন্স ২০১৫ সালে বিশেষ একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই আইনের বদৌলতে ধর্মীয় কারণে ব্যবসায়ীরা সমকামী পুরুষদের কাজে নিয়োগ বন্ধ করতে পারেন।

এ ছাড়া বর্ণবৈষম্য ইস্যুতেও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—দুদল দুই মেরুতে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে উত্তাল হয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ট্রাম্পের আচরণ ও বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। 

এদিকে অনেকেই মনে করছেন, ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক আসলে আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগাম প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেননা, পেন্সকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তরসূরি মনে করা হচ্ছে। মার্কিন রাজনৈতিক মহলের অভিমত, আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাইক পেন্স প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারেন। কারণ, তাঁর ইন্ডিয়ানার গভর্নর হিসেবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অন্যদের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখবে। সে তুলনায় কমলা হ্যারিসের অভিজ্ঞতা কিছুটা কম। তবে কমলা হ্যারিসেরও ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে জো বাইডেন দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন, তাই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।