যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের জন্য হুমকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

দুই মাস আগে দেউলিয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ বৃহত্তম ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি (এসভিবি)। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের আর্থিক খাত টালমাটাল অবস্থানে রয়েছে। এসভিবি ব্যাংকের পতনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করছে ব্যাংকাররা। ব্যাংকটির সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গ্রেগ বেকারও একই কথা বলেছেন। এরপর থেকেই ব্যাংকাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকে ঘিরে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ এবং জরুরি প্রক্রিয়াগুলোকে শক্তিশালী করছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
ব্যাংকিং ইন্ড্রাস্টির সাত নির্বাহী ও বিশ্লেষকদের মতে, অনলাইনে হুমিক মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও পরিকল্পনা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর নির্বাহীরা। ব্যাংকের অবস্থা সম্পর্কে গুজব বন্ধ করতেও তারা কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোর এরকম পদক্ষেপ এর আগে দেখা যায়নি। তবে, সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই নির্বাহীরা এমনটা করছেন। অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংকের শেয়ার বাজারে আঘাত ও আমানতকারীদের অর্থ তুলে নিতে প্রভাবিত করার বিরুদ্ধেই কাজ করছে ব্যাংকগুলো।
প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে মার্কেটিংয়ের জায়গা না ভেবে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে পুনর্বিবেচনা করছে ঋণদাতারা। এ জন্য পদক্ষেপও নিচ্ছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এসভিবি ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্রিবত হয়ে পড়েন। এতে করে প্রতি সেকেন্ডে ব্যাংকটি থেকে ১০ লাখ করে ডলার তুলে নিয়েছিলেন আমানতকারীরা। আর এতেই গত ১০ মার্চ দেউলিয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ এই ব্যাংকটি।
ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া ফার্ম থটলিংকসের প্রতিষ্ঠাতা সুমিত চ্যাবরিয়া বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঝুঁকি প্রাথমিকভাবে সুনামজনক ছিল। কিন্তু, এখন এটি ডিপোজিট ফ্লাইট ঝুঁকির দিকে পরিচালিত করেছে, যা অস্তিত্বশীল।’
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আজকের অবস্থার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকাংশে দায়ী করছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও গ্রেগ বেকার। গত সোমবার সিনেট ব্যাংকিং কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের ব্যাংক থেকে চার হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নিয়েছিলেন আমানতকারীরা।’
এসভিবির পতন গোটা ব্যাংকিং সেক্টরকে হতবাক করেছিল। গত ৮ মার্চ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছিল যে এটি সিকিউরিটিজ বিক্রি করে মূলধন বাড়াচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকটির অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ ছড়িয়ে যায় আমানতকারীদের মাঝে। এরই মধ্যে ব্যাংকটি সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে একের পর এক টুইট করতে থাকে অনেকে। পরে, মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ তুলে নেন আমানতকারীরা।
গ্রেগ বেকারের মতোন নিজের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পতনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেছে ফাস্ট রিপাবলিক ব্যাংকের সাবেক সিইও মাইকেল রফলার। এসভিবির পতনের দুই মাস বাদেই এই ব্যাংকটিও দেউলিয়া হয়ে যায়।
সুমিত চ্যাবরিয়া বলেন, ‘ছোট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি একটি সতর্কবার্তা। যারা কিনা হুমকি মোকাবিলা ও ঝুঁকির ক্ষমতা আপডেট করতে কাজ করছে।’

রয়টার্স বলছে, ইতোমধ্যে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলেছে।