যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে ভবন ধসে নিখোঁজের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯

Looks like you've blocked notifications!
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ১২ তলা ভবন ধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫৯ জন নিখোঁজ। ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে একটি ১২ তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধসে পড়ার পর সেখানে এখনও নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৯ জনে। উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আরও তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করার পর এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার জনে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও উদ্ধারকারী দলের একজন মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাঁরা এখনও লোকজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের আশা করছেন।

এর আগে মায়ামি-ডাডের মেয়র ড্যানিয়েল লেভিন-কাভা জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার সময় ভবনটিতে অবস্থানকারীদের সংখ্যা তাঁদের হিসাব মতে ১০২ জন। তবে, ভবন ধসের মুহূর্তে বহুতল ওই ভবনে আসলে কত মানুষের বসবাস ছিল, তা পরিষ্কার নয়।

ভবনটি ধসে পড়ায় ওই কমপ্লেক্সের ১৩০টি ইউনিটের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবন ধসের কারণ এখন জানা যায়নি।

সার্ফসাইড শহরে এই ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল ১৯৮০ সালে।

ভবন ধসের পর থেকে যারা নিখোঁজ, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন লাতিন আমেরিকান অভিবাসী রয়েছে বলে ওই দেশগুলোর কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছে। প্যারাগুয়ের ফার্স্ট লেডির এক স্বজনও নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বলে প্যারাগুয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

উদ্ধারকারীরা প্যারাগুয়ের ফার্স্টলেডি সিলভানা লোপেজ মোরেইরার বোন, বোনের স্বামী, তাঁদের তিন সন্তান ও গৃহকর্মী কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা ৩৫ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উদ্ধারকারী ও তল্লাশি দলগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া একটি পার্কিং গ্যারেজ থেকে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তারা ধ্বংসাবশেষের নিচে বেঁচে থাকা মানুষের সন্ধান পেয়েছে।

এদিকে, ভবনের ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চলাকালীন একটি ছোট অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে ২০ মিনিটের মধ্যেই তা নিভে যায় বলে জানান মায়ামি-ডাডের ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর প্রধান রাইডে জাদাল্লাহ। তিনি আরও জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে কোথাও কেউ আছে কি না, তা অনুসন্ধানের জন্য তাঁরা সোনার যন্ত্র, অনুসন্ধানী ক্যামেরার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করছেন। তবে, ধ্বংসস্তূপ যেকোনো সময় সরে গিয়ে আরেকটি ধসের আশঙ্কা থাকায় উদ্ধারকাজের এই পদ্ধতি বেশ ধীরে এবং নিয়ম মেনে করা হচ্ছে।

সার্ফসাইডের মেয়র চার্লস বারকেট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভবনের পেছনের দিকে, এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি সম্পূর্ণ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, অগ্নিকাণ্ড ও উদ্ধারকাজ এখনও তল্লাশি ও উদ্ধার তৎপরতার মধ্যেই রয়েছে।

ফ্লোরিডার গভর্নর বলেন, ‘এরকম বিশাল ভবন ধসে যাওয়া সত্যিই বেদনাদায়ক।’

ঘটনাস্থলে থাকা বিবিসির সংবাদিক জানান, ভেঙে পড়া ভবন থেকে কয়েক ব্লক দূরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিখোঁজদের স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনের অবস্থা জানার জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে, তাঁদের কাছে সবচেয়ে খারাপ খবর আসার আশঙ্কাই বেশি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি অপেক্ষা করছেন কখন ফ্লোরিডার গভর্নর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। দেশটির কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (ফেমা) কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে আছেন।

জো বাইডেন বলেন, ‘আমি ফ্লোরিডার জনগণকে বলছি—কেন্দ্রীয় সরকার দিতে পারে এমন সব সহায়তা আপনারা চাইতে পারেন। আমরা অপেক্ষা করছি, কেবল আমাদের জানান। আমরা সেখানে থাকব।’

দেখে মনে হয়েছিল ৯/১১-এর মতো

বারো তলা চ্যাম্পলাইন টাওয়ারগুলোর অবস্থান ৮৭৭৭ কলিন্স অ্যাভিনিউতে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মায়ামি সমুদ্র সৈকতের উত্তরে সার্ফসাইড শহরে এই কলিন্স অ্যাভিনিউ।

স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, তিনি ভবনটি ধসে পড়ার শব্দ শুনতে পান। তিনি সিবিএস মায়ামিকে বলেন, ‘একটা গমগম শব্দ শুনেছিলাম। ভেবেছিলাম, হয়তো কোনো মোটরসাইকেলের শব্দ। ঘুরে তাকাতেই দেখলাম—একটা ধুলোর কুণ্ডলি আমাদের দিকে আসছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, “আমাদের একটা কথাই মনে হচ্ছিল—এসব কী হচ্ছে? আমরা শার্ট দিয়ে মুখ ঢেকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং নিরাপত্তাকর্মীকে দেখে জিজ্ঞাসা করি ‘কি হয়েছে?’ তিনি বলেন, একটি ভবন ধসে গেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে ধ্বংসস্তূপ দেখে সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘দেখে মনে হয়েছিল ৯/১১-এর মতো ঘটনা।’ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলার পর সেটি ধসে পড়ে।

৫০ বছর বয়সী সান্টো মেজিলের স্ত্রী একজন বয়স্ক প্রতিবন্ধী নারীর রাত্রিকালীন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করেন। তিনি চ্যাম্পলাইন টাওয়ারের তিনটি ভবনের একটির নবম তলায় কাজ করতেন। ঘটনার রাতে স্ত্রীর ফোন পেয়ে জেগে ওঠেন মেজিল। ততক্ষণে ভবনটি ধসে পড়েছে।

মায়ামি হেরাল্ডকে মেজিল বলেন, ‘আমার স্ত্রী জানায় যে একটা বড় বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনেছে। তার কাছে মনে হচ্ছিল বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে।’ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মেজিলের স্ত্রীও ছিলেন।

ধসে পড়া ভবনটির পাশের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যম সিবিএসের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন : ‘বিল্ডিং কাঁপতে লাগল। তারপর আমি জানালার বাইরে তাকালাম, কিন্তু কিছু দেখতে পারলাম না। আমি ভেবেছিলাম ঝড়ের মতো কিছু হয়েছে। ধুলো পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর দেখি এত বড় ভবনের পেছনের দুই-তৃতীয়াশ ধসে পড়েছে।’