রাশিয়ার ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা

Looks like you've blocked notifications!

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিলেন, নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছে রাশিয়া। কিন্তু এরপরই রাশিয়ার এই দাবি সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কানাডা এরই মধ্যে রাশিয়ার ভ্যাকসিন তৈরির দাবি খারিজ করে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এ ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেয়নি। তারা জানিয়েছে, অনুমোদন দেওয়ার আগে সুরক্ষাবিষয়ক যাবতীয় তথ্য খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।   

রাশিয়া তাদের করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ৫’ নিয়ে কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রতিবেদন দেয়নি। সাধারণত তৃতীয় পর্যায়ে কয়েক লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তার ফলাফল সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পরই ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। রাশিয়ার দাবি, তারা হাজার কয়েক লোকের ওপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করেছে। মস্কোভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস অর্গানাইজেশন চলতি সপ্তাহেই রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল, এ ভ্যাকসিন নিয়ে তাড়াহুড়ো না করতে। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। রুশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সুরক্ষা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের বিচার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’ গত সপ্তাহেও তারা রাশিয়াকে জানিয়েছিল, রাশিয়া যেন সুরক্ষা ও কার্যকারিতা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠিত বিধি মেনে চলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০টির বেশি উদ্যোগ। একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত কয়েক বছর সময় লাগে। তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

রাশিয়া এত তাড়াতাড়ি করোনার ভ্যাকসিন বের করে ফেলায় বিশেষজ্ঞদের একাংশ রীতিমতো সন্দিগ্ধ। তাঁদের মতে, ভ্যাকসিন নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রায়াল দিতে হয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে হয়। বিভিন্ন ধরনের মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করতে হয়। 

লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডানকান ম্যাথুজের বক্তব্য, ‘ভ্যাকসিন তৈরির খবর অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। কিন্তু এর সুরক্ষার দিকটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ 

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ল বিশেষজ্ঞ লরেন্স গস্টিন বলেছেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার ভ্যাকসিন শুধু যে অকার্যকর হতে পারে তা-ই নয়, নিরাপদ নাও হতে পারে। পরীক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফসি গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, ‘আমার আশা যে চীন ও রাশিয়া মানবদেহে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে তা  ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবে।’ 

আরেক বিশেষজ্ঞ পিটার ক্রমসনারের মতে, ‘এ ভ্যাকসিন নিয়ে দীর্ঘ পরীক্ষা দরকার। তা না করে বাজারে ছাড়া হলে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হবে।’

নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষা ও এর ফলাফল বিশ্লেষণ করার পরই সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে। তার জন্য সময় লাগে। তাই রাশিয়া তাদের এই ভ্যাকসিন তৈরিকে ‘অসাধারণ’ ও ‘গৌরবজনক’ বলে দাবি করলেও এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।