রাশিয়া কি ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করবে?
রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেন জীবাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি সভাও হয়েছে রাশিয়ার অনুরোধে। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া কি ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে কি না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা হিসেবে জীবাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা। ইউক্রেনের ল্যাবরেটরি আছে এবং সেগুলো বৈধ। দেশটির সরকার বলছে, তাদের বিজ্ঞানীরা কোভিডের মতো নানা মহামারি থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এসব ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটিতে এখন যুদ্ধ চলছে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইউক্রেনকে বলেছে, তাদের ল্যাবরেটরিতে কোনো বিপজ্জনক জীবন্ত উপাদান থাকলে সেগুলো ধ্বংস করতে।
রাসায়নিক অস্ত্র আসলে কী এবং জীবাণু অস্ত্রের চেয়ে সেটা কীভাবে আলাদা করা যাবে। এটি এমন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র যা টক্সিন বা রাসায়নিক পদার্থ। এটি মানুষের শরীরের সিস্টেমগুলোতে আক্রমণ করে। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে। একটা আছে চোকিং এজেন্ট- যা ফুসফুস ও রেসপিরেটরি সিস্টেমে আক্রমণ করে ফুসফুসকে অচল করে দেয়। আবার ব্লিস্টার এজেন্ট হিসেবে আছে মাস্টার্ড গ্যাস। এটা শরীরের চামড়া পুড়িয়ে দেয় ও মানুষকে অন্ধ করে দেয়।
কিছু আছে মারণাস্ত্র ধরনের। যেমন নার্ভ এজেন্ট যা মস্তিষ্কে ও শরীরের পেশিতে ঢুকে পড়ে। এর ক্ষুদ্র কণার পরিমাণও প্রাণঘাতী হতে পারে। আধা মিলিগ্রাম ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। আর এসব কথিত রাসায়নিক উপাদান যুদ্ধ ক্ষেত্রে কামানের গোলা, বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এর সবই ১৯৯৭ সালে কেমিক্যাল উইপন কনভেনশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনস বা ওপিসিডব্লিউ, এ বিষয়ে বৈশ্বিক মনিটরিং প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত এসব অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার ও বিস্তার প্রতিরোধ বিষয়ে কাজ করে।
এসব অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, ইরাক-ইরান যুদ্ধে এবং সম্প্রতি সিরিয়ায়। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ২০১৭ সালে তাদের রাসায়নিক অস্ত্রের সর্বশেষ সম্ভার ধ্বংস করেছে। যদিও এরপর অন্তত দুটি রাসায়নিক হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়।
২০১৮ সালের মার্চে সলসবারিতে প্রথম ঘটনা ঘটে। সেখানে সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপল ও তার কন্যা নার্ভ এজেন্টের শিকার হন। রাশিয়া এর দায় অস্বীকার করে। কিন্তু তদন্তকারীরা বলছে এটা রাশিয়ান দুজন সামরিক গোয়েন্দার কাজ। পরে এর জের ধরে বিভিন্ন দেশ থেকে ১২৮ জন রাশিয়ান গুপ্তচর ও কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর ২০২০ সালের আগস্টে রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি নভিচক এজেন্টে আক্রান্ত হন। তবে তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়, যদি রাশিয়া যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে বিষাক্ত কোনো গ্যাস ব্যবহার করে তাহলে সেটি হবে বড় ধরনের সীমা লঙ্ঘন। যা পশ্চিমা বিশ্বকে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।
সিরিয়ায় রাশিয়া এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু তারা বাশার আল আসাদের সরকারকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিল যুদ্ধে, যে সরকারের বিরুদ্ধে অন্তত এক ডজন রাসায়নিক হামলার অভিযোগ আছে।
বাস্তবতা হলো যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে সেখানে আক্রমণকারী মিলিটারি জয় অর্জনের জন্য এটিকে কার্যকর পথ ভাবতে পারে। সেটাই সিরিয়া করছিল আলেপ্পোতে।