শান্তি আলোচনায় ‘অচলাবস্থা’, ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে রাশিয়া
রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভের উপকণ্ঠে সামরিক অভিযান কমানোর প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে বলে স্থানীয় সময় বুধবার জানিয়েছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দুদেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার সাম্প্রতিক দফায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বুধবার বলেছে, রাশিয়া গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কিয়েভের আশপাশে অল্পসংখ্যক সৈন্য মোতায়েন রেখেছে। তবে, ‘সেনারা তাদের ব্যারাকে ফিরে যায়নি।’
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি বলেছেন, রুশ সেনারা ব্যারাকের দিকে ফিরে যাচ্ছে না। ‘তারা কিয়েভ ছেড়ে শহর থেকে কিছুটা দূরে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, রুশ বাহিনীর অধিকাংশই এখনও কিয়েভের আশপাশেই রয়েছে এবং বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে৷
এদিকে, বুধবার রাশিয়া বলেছে—ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতির কোনো লক্ষণ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে কথা বলার সময়ও বাহ্যত অচলাবস্থা দেখা দেয়।
ইউক্রেনীয় নেতা জেলেনস্কি বাইডেনকে আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন উল্লেখ করে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন জেলেনস্কিকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সরকারকে ৫০ কোটি ডলার সরাসরি বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রদান করতে চায়।’
একদিকে যখন শান্তি আলোচনায় এ আহ্বান ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তখন নতুন এক গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা গেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার মাসব্যাপী আগ্রাসন নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তাঁর জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা ভয়েস অব আমেরিকাকে নিশ্চিত করেছেন, ‘এখন পুতিন ও এমওডি (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনা চলছে।’
ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তার (পুতিন) জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা তাঁকে সত্য কথা জানাতে খুব ভয় পায়।’ গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, পুতিনের সহযোগীরা তাঁকে রাশিয়ার সেনাদের অগ্রগতির পাশাপাশি রাশিয়ার অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কেও ভুল তথ্য দিয়েছে।
অন্যদিকে, ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দারাও বুধবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ভেতরের দ্বন্দ্বের আরও কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে।
এ ছাড়া অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তারাও সতর্ক করেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বাইরেও এ যুদ্ধের সম্প্রসারণের চেষ্টা করতে পারে।
ইউএস ইউরোপিয়ান কমান্ডের সুপ্রিম অ্যালাইড কমান্ডার ও কমান্ডার জেনারেল টড ওল্টারস বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ‘সব সময়ই একটি ঝুঁকি থাকে।’
এদিকে বুধবার রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় এখনও অগ্রগতির লক্ষণ নেই। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৩৬ দিনের যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে আলোচনার শুরুতে ইউক্রেন তাদের দাবির একটি তালিকা উপস্থাপন করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন সহযোগী বলেছেন, মঙ্গলবারের অধিবেশনে উভয় পক্ষ ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষার নিশ্চয়তাসহ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেছে।
ইউক্রেনীয় আলোচকেরা প্রস্তাব দিয়েছেন—নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিনিময়ে কিয়েভ ন্যাটো বা অন্য কোনো সামরিক জোটে যোগদান না করার মতো একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করবে।
সাংবাদিকদের পেসকভ বলেছেন, মস্কো এ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে যে, কিয়েভ দাবির একটি লিখিত বিবৃতি পেশ করেছে। তবে, চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর মতো আশাব্যঞ্জক কিছু রাশিয়া দেখেনি।