সমালোচনার মুখে ভারতে আটকেপড়া নাগরিকদের ফেরাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

Looks like you've blocked notifications!

ভারতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে ভারত থেকে ফেরা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ফ্লাইট। এমনকি, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরাও যদি ভারত থেকে নিজ দেশে ফিরে আসেন, তাহলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই করোনার এমন পরিস্থিতিতে নিজ দেশের নাগরিকদের সহযোগিতা না করার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। মূলত জেল-জরিমানার কথা উঠতেই নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। তাই অস্ট্রেলিয়া সরকার বর্তমানে সে পথে হাঁটবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

নানা সমালোচনার পর এবার সিদ্ধান্ত পাল্টে ভারতে আটকে থাকা নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য তিনটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা ৯০০ জন অসি নাগরিক চলতি মাসের মাঝমাঝি সময়ে এসব ফ্লাইটে ফিরতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার এই পরিকল্পনার ব্যাপারে জানিয়েছেন।

স্কট মরিসন বলেছেন, ‘আমরা আগামী ১৫ মে’র মধ্যে একটি পর্যায়ে পৌঁছাব। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ভারত থেকে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হব।’     

ভারতে প্রায় ৯ হাজার অস্ট্রেলীয় রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৬০০ জন করোনার ব্যাপক সংক্রমণ এলাকায় আছে। তাদের অবস্থা নাজুক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের হুমকির মুখে যারা দেশে ফিরে আসতে চান, তাঁদের জন্য অসি সরকারের নেওয়া জেল-জরিমানার সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছিলেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশ্লেষক ড. ভিয়োম শার্মের। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারগুলো ভারতে আক্ষরিক অর্থেই মারা যাচ্ছে... সেখানে তাদের বের করে আনার পথ নেই, আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৩ মে থেকে তার আগের ১৪ দিনের মধ্যে যাঁরা ভারতে ছিলেন, তাঁদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। যাঁরা এই আদেশ মানবেন না, তাঁদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, সেই সঙ্গে ৬৬ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার জরিমানাও হতে পারে বলে জানানো হয়। আগামী ১৫ মে এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকার পর আবার পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘সরকার হালকাভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। অস্ট্রেলিয়ার জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা রক্ষা করা, সেইসঙ্গে কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোয় কোভিড-১৯ রোগীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’

অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভারতে ভেন্টিলেটর, চিকিৎসা উপকরণ এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠাবে।

মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই এ থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে তাতে সংক্রমণের হার প্রায় শূন্যে নেমে এলেও এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার কম হলেও, এসব নীতির কারণে অনেক অস্ট্রেলীয় বিদেশে আটকে পড়েছেন এবং দেশটিকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এদিকে, ভারতে প্রতিদিনই সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার চার লাখের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ছুঁইছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়েছে ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা। এ ছাড়া দেখা দিয়েছে তীব্র অক্সিজেন সংকট। করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়ছে ভারত সরকার।