সুদানে সেনা অভ্যুত্থান : তহবিল আটকে দিল বিশ্বব্যাংক
সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির জন্য বরাদ্দ তহবিল আটকে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সুদানের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং এসবের কারণে দেশটির আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
গত মার্চে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার নেয় সুদান। কৃষি, গণপরিবহণ, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নে এই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তিন দশক পর এই প্রথম বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তা পেয়েছিল সুদান।
অন্যদিকে, গতকাল বুধবার আফ্রিকার দেশগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ‘অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের’ কথা বলে সুদানের সদস্যপদ স্থগিত করেছে।
এ ছাড়া সুদানের জন্য বরাদ্দ করা ৭০ কোটি ডলারের সহায়তার অর্থ আটকে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এসব বরাদ্দ আটকে যাওয়ায় অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহান বেশ চাপের মুখে পড়বেন। সবে ঘুরে দাড়াচ্ছিল সুদানের অর্থনীতি। এমন সময় নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়ল দেশটি। ধারণা করা হচ্ছে, এই রাজনৈতিক অস্থিরতা আবারও সুদানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসবে।
গত সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ হামদুকসহ চার মন্ত্রীকে বন্দি করে সুদানের সেনাবাহিনী। দুই বছর ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির ভিত্তিতে চলছিল দেশটি। গত সোমবার সামরিক বাহিনী পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতার দখল নেয়। তারা বলছে, গৃহযুদ্ধ এড়াতে এবং গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতেই এ অভ্যুত্থানের দরকার ছিল।
এদিকে, গতকাল বুধবার সুদানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দেশটির সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনসহ ছয়টি দেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এরা সবাই সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, অভ্যুত্থানের তৃতীয় দিনেও রাস্তায় নেমে সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভ করেছে সুদানিরা। এ পর্যন্ত বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। রাজধানী খার্তুমে বিক্ষোভের সংগঠকদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে সেনাসদস্যেরা।
চিকিৎসক ও তেল সম্পদ খাতের কর্মীদের সমিতি সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সুদানিজ ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশনও সামরিক সরকারকে সমর্থন জানাতে নারাজ। অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আবদুল রাশিদ খলিফা বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা সামরিক পদক্ষেপ এবং যেকোনো ধরনের সামরিক শাসনের বিরোধী।’
দীর্ঘ দিনের শাসক ওমর আল-বশিরের পতনের পর ২০১৯ সালে সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও শেষমেষ সামরিক শাসনেই পা বাড়াল সুদান।