যেভাবে বেঁচে আছেন সাদ্দাম হোসেন!
মৃত্যুর ১০ বছর পরও বেঁচে আছেন ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। তবে এই বেঁচে থাকা প্রতীকী। বাগদাদের দোকানি আনোয়ারের মতে, তাঁর সংগ্রহে থাকা সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ছবি সংবলিত পয়সা, ডাকটিকেট ও পোস্টারের মধ্যেই জীবিত আছেন সাদ্দাম হোসেন।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও জীবিত অবস্থায় সাদ্দাম হোসেন তাঁর বিরোধীদের প্রতি ভীষণ কঠোর ছিলেন তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর নেতৃত্বে দুইবার নৃশংস যুদ্ধও হয়েছে দেশটিতে। তারপরও এখনো অনেক ইরাকি আছেন যাঁরা সাদ্দামের শাসনকালকেই ভালো সময় বলে মনে করেন। বিশেষ করে ২০০৩ সালের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটিতে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের এই চিন্তা।
বাগদাদের এই অ্যান্টিক সামগ্রী বিক্রেতা আনোয়ার নিজের দোকানে গর্বের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন একটি চামড়ার তৈরি পিস্তলের খাপ। যার ওপর লেখা রয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষে।’
এই জিনিসটি সম্পর্কে আনোয়ার জানান, যোগ্য সেনা কর্মকর্তাদের এটি উপহার হিসেবে দিতেন সাদ্দাম হোসেন। শুধু এই পিস্তলের খাপটিই নয়, সাদ্দাম হোসেন সম্পর্কিত যে জিনিসই পাওয়া যায় সেটিই খুব যত্নের সঙ্গে সংগ্রহ করেন আনোয়ার। আর এ সবকিছুই যে বিক্রির জন্য তা নয়, কিছু জিনিস নিজের জন্যও রাখেন তিনি।
সাদ্দাম হোসেনকে এত পছন্দের কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেন জানতেন এই দেশকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আর আমি এটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ হিসেবে বলছি।’ এর অর্থ আনোয়ার ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। আর সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে শিয়া ও কুর্দিদের ওপর মারাত্মক নিপীড়নের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৮২ সালে শিয়া অধ্যষিত দুজাইল গ্রামে ১৪৮ জন শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডিত হন সাদ্দাম হোসেন। আর এই অপরাধে ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ক্ষমতায় থাকাকালীন সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ ওঠে। তবে সেসময় দেশে স্থিতাবস্থা ছিল, শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো ছিল, স্বাস্থ্য খাত উন্নত ছিল এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষের জন্য উন্নত জীবনব্যবস্থা নিশ্চিত ছিল। আর তাঁর পতনের পর থেকেই এসব কিছুর সরবরাহে দেখা দিয়েছে স্বল্পতা।
আনোয়ারের অ্যান্টিক সামগ্রির দোকানে এসেছিলেন আবু ওসামা নামের এক ক্রেতা। তিনি সাদ্দামের ছবি সংবলিত ডাকটিকেট খুঁজছিলেন। সেইসঙ্গে সাদ্দামের ছবি সংবলিত একটি বইও নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। সুন্নি সম্প্রদায়ের মানুষ আবু ওসামা ছিলেন সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তবে নিজে সাদ্দাম হোসেনের সমর্থক নন বলেও দাবি করলেন। অবশ্য সঙ্গে এটাও বললেন, ‘কিন্তু আমি ন্যায়বিচার ভালোবাসি এবং বর্তমানে দেশে ন্যায়বিচারের ভীষণ অভাব।’ নিজের বাড়িতে সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলের স্মৃতি সংরক্ষণ করে রেখেছেন বলেও জানালেন আবু ওসামা।